পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 দ্বিপুদাদার উপর হুকুম জারী হল আয়োজন করতে। বড়মাসিমা প্রভৃতি বাড়ির বড়রা এসে বসলেন ঈজিচেয়ারে ঠেসা দেওয়া অর্ধশায়িত দাদামশায়ের দুপাশে। তাঁর কানে ear trumpet লাগান হল। আমি বেহালা বাজিয়ে হাফেজ গাইলাম আমার দেওয়া সুরে। দাদামশায় মজে মজে শুনতে লাগলেন। তার কিছুদিন পরে দ্বিপুদাদা এলেন আমাদের বাড়িতে কাশিয়াবাগানে। এসে বললেন—“চল আমার সঙ্গে হ্যামিল্টনের দোকানে। কর্তা হুকুম করেছেন তোর জন্যে হাজার টাকার মধ্যে একটা গয়না কিনে দিতে। তোকে এখন জানান বারণ ছিল—যেদিন দেবেন একেবারে হঠাৎ সেদিন জানবি—এই তাঁর ইচ্ছে। কিন্তু আমি ভেবে দেখলুম কি কিনতে কি কিনব শেষকালে তোর যদি না পছন্দ হয়, সুতরাং তোকে বলে দেখিয়ে তোর পছন্দ মত কেনাই ভাল। আর কাউকে বলিসনে এখন—আয়।” হাজার টাকার মধ্যে আমার পছন্দসই জিনিস হ্যামিলটনে নেই, তাই পাশের দোকানে নিয়ে গেলেন দ্বিপুদাদা। সেখানে একটা হীরে ও চুনির সেট, নেকলেস ও এক জোড়া ব্রেসলেট আমার পছন্দ মত কিনলেন। তারপর প্রকাশ্যভাবে আমার একদিন ডাক পড়ল। বাড়ির লোকের সভা লাগল। দাদামশায় নেকলেসটি বের করে আমার হাতে দিয়ে বললেন—“তুমি সরস্বতী। তোমার উপযুক্ত না হলেও এই সামান্য ভূষণটি এনেছি তোমার জন্যে।” আমি তাঁর স্বভাবসুলভ সৌজন্যপূর্ণ কথা কয়টিতে অভিভূত হয়ে তাঁর স্নেহের দান অবনতমস্তকে গ্রহণ করলুম। হাফেজের সেই গানটির স্বরলিপি শত গানে আছে। কথাগুলি নিম্নে দিচ্ছিঃ—

দেশাবে চেহেরয়ে জাঁ মেশবদ্‌ গোবারেতনম্‌
খোশাদমেকে জাঁ চেহরা পরদা বরফগনম্‌॥
চঁণী কফস ন সজায়ে চুমনে খোসেল হানেস্তে
রবম্‌ বগোলসনে রেজোঁয়া কে মুরগে চমনম্‌॥

 ইহার সংক্ষেপার্থ এই যে, আমার মত এমন সুকণ্ঠ পাখীর উপযুক্ত এই মর্তলোক নয়, আমি সেই যুগের কাননে যাব, যেখানকার আমি। এই গান তার পরের বছর কংগ্রেস প্রেসিডেণ্ট মিস্টার সিওয়ানি সাহেব যেদিন আমাদের বাড়ি চা খেতে আসেন তাঁকে শোনান হয়েছিল। হিন্দু বাঙালী মেয়ের মুখে বিশুদ্ধ উচ্চারণে (দাদামশায়ের কাছে শেখা) ফার্সি গান শুনে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন। এই গান বম্বের মুসলমান পরিবারে আনন্দের তরঙ্গ তুলেছিল, আমাকে তাঁদের আরো নিকটতর

৮০