পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিন্তু সর্তটা শুধু কাগজে লেখাই রয়ে গেল। না কেউ কাজ করলে, না কারো পূর্ব অভিভাবক বা স্বামী তার হয়ে টাকাটা সখিসমিতিকে ফিরিয়ে দিলে—একজন মাত্র কিয়দংশ ছাড়া। সখিসমিতির পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে মকদ্দমা আনা যেতে পারত—কিন্তু সখিসমিতি তার থেকে বিরত রইল। যারা চুক্তি ভঙ্গ করলে, তাদের পাপ তাদের শিরে বোঝাই করে রাখলে, এবং অন্তঃপুরে শিক্ষয়িত্রী পাঠানর কল্পনাটি সখিসমিতির প্রোগ্রাম থেকে একেবারে মুছে ফেলা হল। একাজ বহু বৎসর পরে হাতে নিলুম আমি—‘ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল’ খুলে।

 সাহেব পাড়ায় একটি বাঙালী পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে খুসীর বিশেষ বন্ধুতা ছিল—তাঁরা জস্টিস চন্দ্রমাধব ঘোষের পত্নী, মেয়ে ও বৌ। তাঁর ছোট মেয়ে জগদীশ রায়ের স্ত্রী নলিনীর সঙ্গে খুসীর ‘জ্যোৎস্না’ পাতান ছিল। একবার খুসীদের বাড়ি যখন গেছি সে আমাকে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে। এ বিষয়ে মায়ের অনুমতি নেওয়া হয় নি, তাঁকে না জানিয়ে কারো বাড়ি বেড়াতে যেতে খুব দ্বিধা আসতে লাগল মনে। খুসী বললে—“তোমার ভয় নেই, আমি গিয়ে তোমার মাকে বলব, কিছু বলবেন না তিনি।”

 গেলুম সেখানে। গিয়ে যে অপূর্ব আনন্দ পেলুম তা আর বলবার নয়। চন্দ্রমাধব ঘোষের বড় মেয়ে—‘দিদিমণি’ সকলেরই দিদিমণি, তিনি টাকীর জমিদারনী, অল্প বয়সে বিধবা, নিঃসন্তান। বৈধব্যের পর পিতৃগৃহে মেম গবর্নেসের কাছে ইংরেজীতে সুশিক্ষিতা, বাঙলা ত ভালরকম জানেনই। আমাদের বাড়ির ধরনধারণ, শিক্ষাদীক্ষা, সাহিত্য ও সঙ্গীত—সব কিছুর প্রতি তাঁদের বিপুল শ্রদ্ধা। সেই বাড়ির একজন মেয়েকে—স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যাকে—নিয়ে আসাতে খুসীর প্রতি ভারি কৃতজ্ঞ হলেন, যেন আকাশের চাঁদ হাতে এনে দিয়েছে। আমার সঙ্গে তাঁদের স্নেহবন্ধন এত সুদৃঢ় হল—আমাকে এত চাইতে লাগলেন—খুসী যেন পিছনে পড়ে গেল। সত্যি তা নয়। তাঁদের হৃদয়ে খুসীর আসন তেমনি অটল রইল, শুধু আর একজনের জন্যে আরো একখানা আসন পাতা হল।

 তারপরে আমার গান গাওয়ার পালা আরম্ভ হল—সেই যেমন অন্যান্য বাড়িতে হত; গায়িকার পক্ষে একটা তফাৎ এই যে, অন্যান্য বাড়িতে পুরুষ শ্রোতা ও সমজদার—এ বাড়িতে রসগ্রাহিণী মেয়েরা শুধু—যাঁদের সঙ্গে আমার রুচিতে রুচিতে হৃদয়ে হৃদয়ে মিল হয়ে গেল। নলিনীর

৮৫