পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
জীবন-স্মৃতি

বাগান বলিলে অনেকটা বেশি বলা হয়। একটা বাতাবি, একটা কুলগাছ, একটা বিলাতি আমড়া ও একসার নারিকেল গাছ তাহার প্রধান সংগতি। মাঝখানে ছিল একটা গােলাকার বাঁধানাে চাতাল। তাহার ফাটলের রেখায় রেখায় ঘাস ও নানাপ্রকার গুল্ম অনধিকার প্রবেশ-পূর্বক জবর-দখলের পতাকা রােপণ করিয়াছিল। ফুলগাছগুলো অনাদরেও মরিতে চায় না তাহারাই মালীর নামে কোনো অভিযােগ না আনিয়া, নিরভিমানে যথাশক্তি আপন কর্তব্য পালন করিয়া যাইত। উত্তর-কোণে একটা ঢেঁকিঘর ছিল, সেখানে গৃহস্থালির প্রয়ােজনে মাঝেমাঝে অন্তঃপুরিকাদের সমাগম হইত। কলিকাতায় পল্লীজীবনের সম্পূর্ণ পরাভব স্বীকার করিয়া এই ঢেঁকিশালাটি কোনো একদিন নিঃশব্দে মুখ ঢাকিয়া অন্তর্ধান করিয়াছে। প্রথম মানব আদমের স্বর্গোদ্যানটি যে আমাদের এই বাগানের চেয়ে বেশি সুসজ্জিত ছিল আমার এরূপ বিশ্বাস নহে। কারণ, প্রথম-মানবের স্বর্গলােক আবরণহীন-আয়ােজনের দ্বারা সে আপনাকে আচ্ছন্ন করে নাই। জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাওয়ার পর হইতে যে-পর্যন্ত না সেই ফলটাকে সম্পূর্ণ হজম করিতে পারিতেছে সে-পর্যন্ত মানুষের সজ্ঞসজ্জার প্রয়ােজন কেবলি বাড়িয়া উঠিতেছে। বাড়ির ভিতরের বাগান আমার সেই স্বর্গের বাগান ছিল—সেই আমার যথেষ্ট ছিল। বেশ মনে পড়ে শরৎকালের ভােরবেলায় ঘুম ভাঙিলেই এই বাগানে আসিয়া উপস্থিত হইতাম। একটি শিশির-মাখা