পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কবিতা রচনারম্ভ
৩৯

তুলিলেন। মনে আছে একদিন একতলায় আমাদের জমিদারি কাছারির আমলাদের কাছে কবিত্ব ঘােষণা করিয়া আমরা দুই ভাই বাহির হইয়া আসিতেছি এমন সময় তখনকার “ন্যাশানাল পেপার” পত্রের এডিটার শ্রীযুক্ত নবগােপাল মিত্র সবেমাত্র আমাদের বাড়িতে পদার্পণ করিয়াছেন। তৎক্ষণাৎ দাদা তাহাকে গ্রেফতার করিয়া কহিলেন “নব-গোপালবাবু, রবি একটা কবিতা লিখিয়াছে, শুনুন না।” শুনাইতে বিলম্ব হইল না। কাব্যগ্রন্থাবলীর বােঝ তখন ভারি হয় নাই। কবিকীর্তি কবির জামার পকেটে পকেটেই তখন অনায়াসে ফেরে। নিজেই তখন লেখক, মুদ্রাকর, প্রকাশক এই তিনে-এক একে-তিন হইয়া ছিলাম। কেবল বিজ্ঞাপন দিবার কাজে আমার দাদা আমার সহযােগী ছিলেন। পদ্মের উপরে একটা কবিতা লিখিয়াছিলাম সেটা দেউড়ির সামনে দাড়াইয়াই উৎসাহিত উচ্চকণ্ঠে নবগােপালবাবুকে শুনাইয়া দিলাম। তিনি একটু হাসিয়া বলিলেন, বেশ হইয়াছে, কিন্তু ওই “দ্বিরেফ” শব্দটার মানে কী।

 “দ্বিরেফ” এবং “ভ্রমর” দুটোই তিন অক্ষরের কথা। ভ্রমর শব্দটা ব্যবহার করিলে ছন্দের কোনাে অনিষ্ট হইত না। ওই দুরূহ কথাটা কোথা হইতে সংগ্রহ করিয়াছিলাম, মনে নাই। সমস্ত কবিতাটার মধ্যে ওই শব্দটার উপরেই আমার আশা-ভরসা সব চেয়ে বেশি ছিল। দফতরখানার আমলা-মহলে নিশ্চয়ই ওই কথাটাতে বিশেষ ফল পাইয়াছিলাম। কিন্তু নবগােপালবাবুকে ইহাতেও লেশমাত্র দুর্বল করিতে পারিল