পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
জীবন-স্মৃতি

সে সম্বন্ধে আমার ঔদাসীন্য ছিল না। সাতকড়ি দত্ত মহাশয় যদিচ আমাদের ক্লাসের শিক্ষক ছিলেন না তবু আমার প্রতি তাঁহার বিশেষ স্নেহ ছিল। তিনি “প্রাণীবৃত্তান্ত” নামে একখানা বই লিখিয়াছিলেন। আশা করি কোনো সুদক্ষ পরিহাসরসিক ব্যক্তি সেই গ্রন্থলিখিত বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করিয়া তাঁহার স্নেহের কারণ নির্ণয় করিবেন না। তিনি এক দিন আমাকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন—তুমি নাকি কবিতা লিখিয়া থাক। লিখিয়া যে থাকি সে কথা গোপন করি নাই। ইহার পর হইতে তিনি আমাকে উৎসাহ দিবার জন্য মাঝে মাঝে দুই এক পদ কবিতা দিয়া তাহা পূরণ করিয়া আনিতে বলিতেন। তাহার মধ্যে একটি আমার মনে আছে,—

রবিকরে জ্বালাতন আছিল সবাই,
বরষা ভরসা দিল আর ভয় নাই।

আমি ইহার সঙ্গে যে পদ্য জুড়িয়াছিলাম তাহার কেবল দুটো লাইন মনে আছে। আমার সেকালের কবিতাকে কোনো মতেই যে দুর্বোধ বলা চলে না তাহারই প্রমাণস্বরূপে লাইন দুটোকে এই সুযোগে এখানেই দলিলভুক্ত করিয়া রাখিলাম,—

মীনগণ হীন হয়ে ছিল সরোবরে
এখন তাহারা সুখে জলক্রীড়া করে।

ইহার মধ্যে যেটুকু গভীরতা আছে তাহা সরোবরসংক্রান্ত— অত্যন্ত স্বচ্ছ।