পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন- স্মৃতি

ইতিহাস নহে—তাহা কোন্ এক অদৃশ্য চিত্রকরের স্বহস্তের রচনা! তাহাতে নানা জায়গায় যে নানা রঙ পড়িয়াছে তাহা বাহিরের প্রতিবিম্ব নহে, সে-রঙ তাহার নিজের ভাণ্ডারের; সে-রঙ তাহাকে নিজের রসে গুলিয়া লইতে হইয়াছে—সুতরাং পটের উপর যে ছাপ পড়িয়াছে তাহা আদালতে সাক্ষ্য দিবার কাজে লাগিবে না।

 এই স্মৃতির ভাণ্ডারে অত্যন্ত যথাযথরূপে ইতিহাস সংগ্রহের চেষ্টা ব্যর্থ হইতে পারে কিন্তু ছবি দেখার একটা নেশা আছে, সেই নেশা আমাকে পাইয়া বসিল। যখন পথিক যে-পথটাতে চলিতেছে বা যে-পান্থশালায় বাস করিতেছে তখন সে-পথ বা সে-পান্থশালক তাহার কাছে ছবি নহে,—তখন তাহা অত্যন্ত বেশি প্রয়ােজনীয় এবং অত্যন্ত অধিক প্রত্যক্ষ। যখন প্রয়ােজন চুকিয়াছে, যখন পথিক তাহা পার হইয়া আসিয়াছে তখনই তাহা ছবি হইয়া দেখা দেয়। জীবনের প্রভাতে যে-সকল শহর এবং মাঠ, নদী এবং পাহাড়ের ভিতর দিয়া চলিতে হইয়াছে, অপরাহে বিশ্রামশালায় প্রবেশের পুর্বে যখন তাহার দিকে ফিরিয়া তাকানাে যায়, তখন আসন্ন দিবাবসানের আলােকে সমস্তটা ছবি হইয়া চোখে পড়ে। পিছন ফিরিয়া সেই ছবি দেখার অবসর যখন ঘটিল, সেদিকে একবার যখন তাকাইলাম, তখন তাহাতেই মন নিবিষ্ট হইয়া গেল।

 মনের মধ্যে যে ঔৎসুক্য জন্মিল তাহা কি কেবলমাত্র নিজের অতীত জীবনের প্রতি স্বাভাবিক মমত্বজনিত। অবশ্য