পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাশিক্ষার অবসান
৭১

একদিন হঠাৎ আমাদের পড়িবার ঘরে মধ্যাহ্নে সে প্রস্তাব করিল, এস, এই বেঞ্চের উপর হইতে লাফাইয়া কাহার কি রূপ লাফাইবার প্রণালী। আমি ভাবিলাম সৃষ্টির অনেক রহস্যই প্রােফেসরের বিদিত, বােধ করি লাফানো সম্বন্ধেও কোনো একটা গুঢ়তত্ত্ব তাহার জানা আছে। সকলেই লাফাইল আমিও লাফাইলাম। প্রোফেসর একটি অৱরুদ্ধ অব্যক্ত হুঁ বলিয়া গম্ভীরভাবে মাথা নাড়িল। অনেক অনুনয়েও তাহার কাছ হইতে ইহা অপেক্ষা স্ফুটতর কোনাে বাণী বাহির করা গেল না।

 একদিন জাদুকর বলিল, কোনো সম্ভ্রান্ত বংশের ছেলেরা তোমাদের সঙ্গে আলাপ করিতে চায় একবার তাহাদের বাড়ি যাইতে হইবে। অভিভাবকেরা আপত্তির কারণ কিছুই দেখিলেন না, আমরাও সেখানে গেলাম।

 কৌতূহলীর দলে ঘর ভরতি হইয়া গেল। সকলেই আমার গান শুনিবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করিল। আমি দুই একটা গান গাহিলাম। তখন আমার বয়স অল্প, কণ্ঠস্বরও সিংহ-গর্জনের মতো সুগভীর ছিল না। অনেকেই মাথা নাড়িয়া বলিল—তাইতো, ভারি মিষ্ট গলা!

 তাহার পরে যখন খাইতে গেলাম তখনাে সকলে ঘিরিয়া বসিয়া আহার-প্রণালী পর্যবেক্ষণ করিতে তৎপূর্বে বাহিরের লােকের সঙ্গে নিতান্ত অল্পই মিশিয়াছি,সুতরাং স্বভাবটা সলজ্জ ছিল। তাহা ছাড়া পূর্বেই জানাইয়াছি আমাদের ঈশ্বর চাকরের লােলুপ দৃষ্টির সম্মুখে লাগিল।