পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তরুণ সভ্যই সাক্ষাৎভাবে তাকে চেনে না। সেজদা বিদেশে গিয়েছিল জার্মানী ঘুরে আসবার চেষ্টায়, সম্ভব হলে বিপ্লবোত্তর অজানা অদ্ভূত রহস্যময় রাশিয়ায়। ইংলণ্ডে পা দেওয়া মাত্র তার পাসপোর্টটি পরীক্ষা ও ভুল সংশোধনের ছুতোয় রহস্যভাবে তলিয়ে গেল সরকারী দপ্তরে, এমন সব গুরুতর আর মারাত্মক সে সব ভুল যে ইণ্ডিয়ার দপ্তরের সঙ্গে লেখালেখি করে সংশোধন করতে দু’মাস কেটে গেল। তারপর মিলল শুধু সোজা দেশে ফেরার ছাড়পত্র। নির্দোষ কৃষিবিদ্যায় বিশেষ শিক্ষালাভের যে প্ৰকাশ্য ছুতো নিয়ে সে বেরিয়েছিল সেটা কিঞ্চিৎ জুটল আর লাভের মধ্যে হল কয়েকজন বিশেষ লোকের সঙ্গে আলাপ-পরিচয়, ভারতের সশস্ত্ৰ বিপ্লব প্ৰচেষ্টায় পশ্চিমের গোপন সাহায্য সহযোগিতা-সহানুভূতির চেয়ে বাস্তবরূপে পাওয়া সম্ভব হবার আশা । সেটাও কম কি ! প্ৰতিমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অমীমাংসিত সমস্যার ভারে বিব্রত বিচলিত অমিতাভকে এক রকম সটান আসতে হল বৈঠকে, খবর সে পেল পথেই। কি ভাবে কেন নাড়া খেল সমাজ ধৰ্ম্মবিশ্বাস সংস্কারের চেতনা, অতীত ভবিষ্যতে সুদূরপ্রসারী সমস্যার ছায়াপাত ঘটল তারিখ পিছিয়ে দেবার তর্কে, তখন চিন্তা করার অবসর ছিল না। জীবনের বিচিত্র বিরাট আশ্ৰয়-ভিত্তির বিনাশ বিকাশ রূপান্তর ঘটার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যাকুল জিজ্ঞাসু হৃদয়মন আজও মানে খুজে খুঁজে চলেছে যে ভাবসংঘাতের, অন্য আলোচনা-প্রসঙ্গে তারই প্ৰায় অচেতন ভূমিকা অভিনয় করে গেল বিপ্লবী পাঁচজন মানুষ। দুজনের মত হল তারিখ পিছিয়ে দেওয়া । কেন ? না, এত যখন দেরি হয়ে গেছেই, আরো কিছুদিন দেরি হোক। শহরের এই অবস্থায় অ্যাকসন স্থগিত করাই উচিত। এই কোথাও কিছু নেই হঠাৎ খাপছাড়া ব্যাপার ঘটে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে অ্যাকসনে, এর মধ্যে নিশ্চয় একটা নিগুঢ় ইঙ্গিত আছে, ঘটনাচক্রের পিছনের দুৰ্বোধ্য কোন শক্তির নির্দেশ আছে। তাদের সাবধান করে দেবার জন্যই হয়তে চামড়ার বন্তি পুড়েছে, হিন্দুমুসলমানে মারামারি হয়েছে! ঠিক এমনি করে না বললেও মোটামুটি এই ছিল দুজনের যুক্তি। এদের দুজনের আগে যোগ ছিল পুরানো দিনের বিপ্লবী দলের সঙ্গে । 8 (፩ ዓ