পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VO) অ্যাকসনের পরিকল্পনায় কালীনাথের ভুল ছিল না, কেবল একটা দিক থেকে সে হিসাব ধরে নি, ধরাটা সম্ভবও ছিল না। শহরে অশান্তি ও আতঙ্ক, এ অবস্থায় হঠাৎ কারো বাড়ীতে স্বদেশী ডাকাত পড়লে, পাড়ার লোকের প্রতিক্রিয়া যে সাধারণ অবস্থার চেয়ে অন্য রকম হতে পারে, তাদের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে, এটা খেয়ালে আসে নি। বাড়ীর সামনে কৰ্ত্তার দেওয়া মস্ত যাত্রার আসর পৰ্য্যন্ত বিনা প্ৰতিবাদে স্বদেশী ডাকাতদের মেনে নেয়, কৰ্ত্তার হা-হুতাশ বৃথা যায়, এই তাদের জানা ছিল। প্ৰথমে কিছু ডাকাডাকি চেঁচামেচি শুরু হতে পারে আশে পাশে, তারা কে টের পাওয়া মাত্র সব চুপ হয়ে যাবে, মনে হবে ভুবনের বাড়ী ছাড়া সমস্ত পাড়া আবার ঘুমিয়ে গেছে। এত বেশি হৈ চৈ হবে, এমন দলবদ্ধ প্ৰতিরোধ আসবে কাজ যখন অৰ্দ্ধেক এগিয়েছে, ছাদ থেকে ভারী বেঞ্চ ও তক্তাপোশে ফেলে গাড়ীর রাস্তা আটক করবে, ভোজালির খোচায় ফাসিয়ে দেবে গাড়ীর টায়ার, কালীনাথেরও তা ধারণাতীত ছিল। ৰাৱ বার ঘোষণা শুনেও যেন ওরা বদ্ধমূল বিশ্বাস কাটিয়ে উঠতে পারে না, বুঝে উঠতে পারে না যে সত্য সত্যই কসাইপাড়ার মুসলমানরা হানা দেয় নি, তারা স্বদেশী বিপ্লবী, লিটন মেমোরিয়েলের কলঙ্ক থেকে শহরকে তারা বঁাচাতে এসেছে। সেটা আশ্চৰ্য্য কিছু নয়, অনেকগুলি মনের একটা ধারণা বদলে আর একটা ধারণা আনতে বিশৃঙ্খলা জাগে, সময় লাগে। তারা স্বদেশী বুঝেও যেন সকলে সংশয়ভরে ইতস্তত করে, ঠিক করে উঠতে পারে না কৰ্ত্তব্য কি ! তারই মধ্যে সংকেত আসে পুলিসের আগমনের, প্ৰায় শেষ মুহূৰ্ত্তে, টাকার বাণ্ডিল বাগিয়ে যখন ভেতর থেকে দলের লোক বেরিয়ে আসছে, বেঞ্চ চৌকি সরিয়ে পথ করা হচ্ছে গাড়ি চলার, তারা যে স্বদেশী এ বিষয়ে সংশয় ঘুচে যাওয়ায় যখন পাড়ার বাসিন্দাদের প্রতিরোধ নিক্রিয় হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকায় পরিণত হয়েছে। শহরের এটা পুরনো অংশ, দোতলা তিনতলা পাকা বাড়ীর এলাকা হলেও রাস্তাটা সঙ্কীর্ণ। SV)