পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শোকাবহ দিকটা তার কাছে মামুলী মনে হত। মানুষকে মরতে দেখে তার কান্না পায়, যন্ত্রণা দেখে তার বুক টন টন করে, মৃতের জন্য শোক তার ধাতে নেই। তার মায়ের মরণ হয়তো জগতের চরম ও শেষ মৃত্যুর মত পরবর্তী সমস্ত মরণকে তার কাছে অর্থহীন করে দিয়েছে। নিজের বিপরীত অভিমানে গড় নিদারুণ এক আত্মিক নিৰ্য্যাতনের কবল থেকে মুক্তির স্বাদে সে এক অপরূপ সুস্থতা বোধ করে নতুবা এই পরিবেশে প্ৰতিমা যখন আপলক চোখে অমিতাভকে দেখছে তখন এভাবে তার দিকে চেয়ে থাকা অশ্লীল হয়ে দাড়াত। অন্দরে ড্রয়িংরুমে বা প্ৰকৃতির রোমান্স-ময় লীলাভূমিতে কোথাও ভদ্র সমাজের ভালমন্দ সরল-চালাক কোন মেয়েকে পাকা কখনো ভাল চোখে দেখতে পারে না, ওরা সবাই ন্যাকামি আর হীন ছলনা চাতুরীতে ভরা কদৰ্য্য, কুৎসিত ওদের হৃদয়মন। ওদের ভাবালু চোখ, মিহি কথা, কোমলতা, হাবভাব সব কিছু মুখোশ, সমস্ত ভাণ। ভাবকল্পনার মানেই শুধু বোঝে না তা নয়, মনে মনে হাসে। ওদের ভেতরটা ফাকা, বাইরেটা ফাকি । ফুলের মত বা পরীর মত সুন্দরী ভদ্র মেয়েদের মধ্যে পাকা চেয়ে দেখার বা তারিফ করার মত রূপ খুজে পায় না, সাজগোজ আর স্বভাবের ন্যাকামির মত এ রূপলাবণ্যও তার বিতৃষ্ণা জাগায়। রুক্ষ মলিন ফুল, চাপা, বেঙিরা বরং তবু চেয়ে দেখার মত, ওরা। তবু মনে তার একটু গ্ৰীতি ও কামনার তাপ আনতে পারে। কিন্তু আসলে সে তো আর সত্য নয়। ভদ্র জীবনের বিজাতীয় আত্মবিরোধিতা থেকে মুক্তিলাভের ছটফটানি অত সরস প্রক্রিয়া নয় যে ভদ্র জীবনকে সোজাসুজি ঘূণা করে অভদ্র অসভ্য জীবনকে ভালবেসে ফেললাম। এক মিথ্যাকে অস্বীকার করতে অন্য মিথ্যা আসে, এক বিকার বর্জন করতে অন্য বিকার প্রশ্ৰয় পায়। মোহই যদি না থাকবে পাকার বাবু-মেয়েদের জন্য, এত তার রাগ কিসের, এমন গায়ে পড়া জালাবোধ ? এদের নিয়ে গড়ে তোলা বাবু ধৰ্ম্মী কাব্য-কল্পনার নিৰ্য্যাস থেকেই যদি তারও অপার্থিব মানসী না সৃষ্টি হয়ে থাকবে, এরা কি আর কিসের মত নয় বলে কেন তার এত জালা, আপসোস, অভিমান ? নতুন মামীর আদর-যত্বের আবেগ-ব্যাকুলত কি NÒV