পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

না, বাড়ীর লোকেরাও না। তার সঙ্গে পাকার ভাব হওয়ার ইতিহাস এই যে, তার বাবা রসিকের সাইকেল সারাই-এর দোকানে পাকা প্রায়ই তার পুৱানো সাইকেলটা নিয়ে যেত টুকিটাকি মেরামতের জন্য। বন্ধুত্ব জমাট বাঁধতে তাদের মাসখানেকও লাগে নি। তারা দু’জন একা থাকলে কানাই-এর মুখ ফোটে। পাকা বলে, কোথায় যাওয়া যায় ! তিনু প্ৰস্তাব করে, তামাক খাবি তো দোকানে যাই চ” । পাকার উৎসাহ জাগে।--তাই চ” । তিনুর বাবা ধনেশ সাধুখানের আছে মুদী-দোকান। দোকানে নিয়ে গিয়ে বন্ধুদের, বিশেষ ক’রে পাকাকে, তামাক লজেন্স বিস্কুট খাওয়াবার লোভটা তিনুর সদা জাগ্ৰত। রোজই প্ৰস্তাব করে দু-চারবার, যখন তখন। পাকা কান দেয় না, রাজি হয় কদাচিৎ। নেমস্তন্নটা যখন সে গ্ৰহণ করে খুশির যেন সীমা থাকে না তিনুর । সৈন্দবাজার এলাকায় ধনেশের দোকান। ভৈরবের বাড়ীও ওই এলাকায়। সৈন্দবাজারের আরম্ভ কোথায় শেষ কোথায় দুশো বছর আগে হয়তো সুনির্দিষ্ট ছিল, আজ কোন মহাপুরুষের সাধ্যও নেই সেটা আবিষ্কার করে। ডাকপিয়ন জৈনুদ্দিন আজ একুশ বছর এ শহরে চিঠি বিলি করছে, খাম পোস্টকার্ডের ঠিকানার নামগুলিই তার কাছে সৈন্দবাজার। রাস্তার দুপাশে শুকনো নালায় ফণিমনসা, পাতাকচু আর বুনো চারার ঝোপ। পথে পুরু ধুলোর আন্তরণ বিছানো । পুরানো ইটের ভাঙ্গাচোরা চৌকো মহলওলা বাড়ীই এই পুরানো শহরের বৈশিষ্ট্য, ইটের স্তুপ হয়ে এখানে সেখানে পোড়ো বাড়ীও পড়ে আছে অনেক, তাতে বাস করে সাপ আর শেয়াল। শহরের প্রাচীনতাই যেন এভাবে স্তপোকার হয়ে স্থানে স্থানে পড়ে আছে। কতকগুলি বাড়ীর খানিকটা অংশ ভেঙ্গে পড়েছে, বাকিটাতে বসবাস করছে মানুষ। এত বেশি পুরানো যে-সব বাড়ী নয়, সেগুলিরও গড়নের ধাচে। আর বিবর্ণিতায় প্ৰাচীনতার ছাপ। শহরের এসব এলাকায় নতুন বাড়ী প্ৰায় চোখে পড়ে না। নতুন বাড়ী দেখা যায় শহরের পূব দিকে, ওদিকের বিস্তীর্ণ প্ৰান্তরে শহর এখনো নিজেকে বাড়িয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছে হাল ফ্যাসনের বাড়ী তুলে তুলে। S 9