পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিজে বিচলিত হওয়া নয়। তার ব্যক্তিগত কোন স্বাৰ্থ নেই, সে কেন ওরকম নিদারুণ মনোকষ্ট পাবে পরের জীবনের বিরোধ আর জটিলতায় । জীবনে যত নতুনত্ব এসেছে ওটা তার সে সব আয়ত্ত করারই প্রক্রিয়া। কালীনাথ বল, স্থ্যামল বল, পাকা বল, কানাই বল-আত্মচিন্তা ওদের পাগল করেছে, আমিত্বের পরাধীনতা ওদের বেঁচে থাকাই ব্যৰ্থ বিশ্ৰী বেদনাদায়ক করে স্বাধীনভাবে বঁাচার জন্য ফাসিকাঠে ঝুলে ঝুলে মরাকেও বড় করেছে। ওদের সংস্পর্শে এসে এই জালার ভাগও পাচুকে নিতে হয়-বিরোধী জগৎকে একেবারে ভেঙে চুরমার করে ফেলার যে আকাশ-ছোয়া স্পৰ্দ্ধা পাকার, সে স্পৰ্দ্ধার সামান্য অংশটুকু পেতে হলেও জগৎকে বিরোধী করায় যে দারুণ মনোকষ্ট তারও একটু ভাগ না নিয়ে উপায় কি ! গায়ের সমবয়সী ছেলেদের সঙ্গে পাচুর ঘনিষ্ঠতার প্রবল জোয়ার-ভাটা ঘটে থাকে। শহরে থাকার সময় দূরত্ব আসে, লম্বা ছুটিতে গায়ে এলে প্ৰথম কিছুদিন অসুবিধার পর ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তবে শেষ পৰ্য্যন্ত খানিকটা ব্যবধান থেকেই যায়। একেবারে কেঁচে গঙুষ করার সাধ্য পাচুর আর নেই। তাদের সমাজের আরও দু-চারটি ছেলে স্কুলে পড়েছে, দু’বছর আগে রাধানাথ ম্যাটািকও পাস করেছে। স্কুলের বিদ্যার যে মানে নেই, নিছক ফাকি, ওরা তার প্রমাণ । গায়ে সমাজে পরিবারে নিজেদের ঠাঁই করে নিতে সব বিদ্যা স্রেফ ভুলে মেরে দিয়ে বসে আছে, কোন কাজেই লাগে না। একটা অকাজে লাগে, সেটা অহমিকা,-আমার পেটে বিদ্যা আছে, আমি স্কুলে পড়েছি। চিঠিপত্র লেখার কাজ পৰ্য্যন্ত হয় না। ওদের দিয়ে, চৰ্চা নেই, ভয় পায়, ভুল হবে, ফাকি ধরা পড়ে যাবে! রাজেন ক্লাস সেভেন পৰ্যন্ত পড়েছিল, তার বাবা চিঠি লেখাতে আসে। পাচুকে পয়সা দিয়ে। পাঁচুও হয়তো ওদের মত হত। কিন্তু তার অন্য জগতের ছোয়াচ লেগেছে। শুধুই সে বিদ্যা লাভ করে নি। এবার পাচুর বিদ্যালাভের কাজ থেকে ছুটিটা সুদীর্ঘ, হয়তো বা চিরদিনের জন্যই। নিজের অজান্তে নিজেকে কেন্দ্র করে আটুলিগার চাষা-ভুষো ছেলেদের একটা দল পাচু গড়ে তুলছিল। এরকম একটা সংগঠন গড়ার কথা সে ভাবে নি, RRbr