পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হারিকেনের আলোয় তার পাশুটে ঠোঁটের হাসিও যেন ঈষৎ রঙিন মনে vহয় : ওরা হিসেব করেছিল, বড় জোর পুরো একটা মাস। ডাক্তার বাজি বলতে পারত, দু-তিন মাসের বেশি শ্যামল জানা পৃথিবীতে টিকতে পারে না, দু’মাস যদি টেকে তো সেটা হবে জগতের আর একটা পরমাশ্চৰ্য্য ব্যাপার! নইলে কখনো ছাড়ে ? শ্যামল একটু থামে। এটা তার স্বভাব। দেশ জুড়ে আবার যখন নতুন করে শুরু হয়েছে সেই সময় ? ইংরেজের হৃদয় নেই, ওরা ড্যামকেয়ার করে সেন্টিমেণ্ট। ওদের মত হিংস্র নেই, ধীর শান্ত হিসেবী হিংস্ৰ । ওদের স্বার্থে ঘা দিয়েছিলাম, তের বছর ধরে আমায় ཅས་ চুরমার করেছে বলেই ওদের প্রতিহিংসা মিটেছে ভাবো ? তাই ছেড়েছে আমায় ? শ্যামল হাসিমুখে তাকিয়ে থাকে, যেন সত্যই প্রশ্ন করছে, জবাব চায়।-দু-চার মাসে মরবাই না জানলে কখনো ছাড়ত না। মরাই যখন নিশ্চয় বাইরে এসে মরি। উদারতাও দেখানো হবে, বিনা যত্নে বিনা চিকিৎসায় মরলে দেশেও একটা কলঙ্ক হবে। পাকা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে, শ্যামল যেন তার কথা বলছে। রাজনীতি সে বোঝে না, সম্প্রতি হৃদয় তার পুড়তে আরম্ভ করেছে বৃটিশ-বিদ্বেষে শুধু এই জন্য যে হাজার হাজার মাইল দূরের ছোট একটা দ্বীপের কয়েকটা লোক তার এতবড় দেশের কোটি কোটি মানুষকে শাসন করছে, দু-একদিন নয়, দেড়শো দু’শো বছর ধরে। স্কুলে ইতিহাস পড়ায়, কিন্তু ইতিহাসের এক কণা মানেও সে বোঝে না, ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আগমন থেকে পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল থেকে, যত কিছু ঘটে এসেছে সব তার কাছে উদ্ভট অবিশ্বাস্য মনে হয়। জাহাজে করে একমাস দেড়মাসের পথ যে ছোট্ট দেশ, সেদেশ থেকে এসে সারা দেশটা তারা দখল করল! একদিনে কয়েক ঘণ্টায় যাদের এই সামান্য কয়েকজনকে লোপাট করা যেত, খবর পৌছে আবার জাহাজে করে যাদের সাহায্য আনতে সময় লাগত। দু-চার মাস, তারা খেলার ছলে পদানত করল দেশটা ৷ তার মানেই আমরা ছিলাম বুনো অসভ্য, গরু-ছাগলের মত, ইংরেজরা ছিল সভ্য বুদ্ধিমান মানুষ। যাই বলি আর যাই করি এ ছাড়া অন্য মানে হয় না। দু-একটা SS