পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম চিন্তা

এ দুয়ের মধ্যে প্রভেদ অনেক; তাহার আলোচনা এস্থলে ’অনাবশ্যক। আধুনিক নিরাকারবাদে ও বেদান্তপ্রতিষ্ঠিত জ্ঞানকাণ্ডেও পার্থক্য অনেক। শ্রুতি ব্রহ্মকে সবিশেষ ও নির্ব্বিশেষ, উভয়রূপেই প্রতিষ্ঠিত করিলেও, বেদান্তের ঝোঁক নির্ব্বিশেষেরই উপরে। কিন্তু বর্ত্তমানে নিরাকারবাদ যে আকার। ধারণ করিয়াছে, বেদান্তের নিরাকারবাদ তাহা হইতে অনেক ভিন্ন। তত্ত্বমসি-—এই মহাবাক্যই বেদান্তের শেষ কথা। ব্রহ্ম আত্মস্বরূপ—আত্মসাক্ষাৎকারে, অপরোক্ষানুভূতিতে,ব্রহ্ম-সাক্ষাৎকার লাভ হয়; আর সে অবস্থায় জ্ঞাত ও জ্ঞেয়ের ভেদজ্ঞান লুপ্ত হইয়া যায়। ব্রহ্মবস্তুকে জ্ঞেয়রূপে প্রতিষ্ঠিত করিতে গেলেই জ্ঞাতার অধীন করা হয়, তাহার স্বাতন্ত্র্য আর থাকে ন॥ সুতরাং বিষয়জ্ঞানে জ্ঞাতাজ্ঞেয়ের ষে সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত হয়, ব্রহ্মজ্ঞানে তাহা হইতে পারে না, জ্ঞেয়রূপে নহে, জ্ঞাতারূপেই ব্রহ্ম-সাক্ষাৎকার লাভ হইয়া থাকে। ইহাই প্রাচীন বৈদান্তিক নিরাকারবাদ। এই নিরাকাববাদ অদ্বৈত-তত্ত্বের উপরে প্রতিষ্ঠিত। নিরাকাববাদ না বলিয়া ইহাকে নির্গুন বা নির্ব্বিশেষ ব্রহ্মবাদও বলা যাইতে পারে।

প্রাচীন নির্গুণ ব্রহ্মবাদ ও আধুনিক নিরাকার ব্রহ্মাবাদ

 এই প্রাচীন নির্গুণ ব্রহ্মবাদ ও আধুনিক নিরাকার ব্রহ্মবাদের মধ্যে প্রভেদ বিস্তর। আমদের নিরাকাববাদ ঠিক নির্গুণবাদ নহে। আমাদের নিরাকারবাদ অদ্বৈতবাদের নামান্তর নহে—ফলতঃ আধুনিক নিরাকারবাদী আচার্য্যগণ প্রায় সকলেই অদ্বৈত ব্রহ্মবাদকে বর্জ্জন করিতে উপদেশ দিয়াছেন। ঈশ্বর নিরাকার, কিন্তু নির্গুণ নহেন। তিনি স্রষ্টা, পাতা, পরিত্রাতা। তিনি পিতা, তিনি মাতা, তিনি সখা, তিনি পরমাত্মীয়। তিনি পুণ্যের পুরস্কর্ত্তা ও পাপের দণ্ডদাতা। এই সকলই ভেদাত্মক, দ্বৈততত্বেই এ সকলের প্রতিষ্ঠা। প্রাচীন নিরাকার-