পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাণের কথা
৩৭

দিয়া নৃত্য করে; তারা জানে না যে এই এক একটী বুদ্‌বুদ যখন ফাটিয়া আকাশে মিলিয়া যায়, তখন নিখিল বায়ুমণ্ডল স্পন্দিত হইয়া উঠে। তেমনি আমরাও জানি না যে, এক একটী ক্ষুদ্র মানব শিশুর প্রথম নিঃশ্বাস যখন এই পৃথিবীতে পড়ে, তখন নিখিল বিশ্বে রোমাঞ্চ উঠিয়া থাকে, এই ক্ষুদ্র জীবের সামান্য নিঃশ্বাসের সঙ্গে কত স্নেহ, কত প্রেম, কত আনন, কত বিষাদ, কত আশা, কত আশঙ্কা-যে বিশাল বিশ্বপ্রাণে শিহরিয়া উঠে, তার খবর কে রাখে? তার ওজন জানে। কে? বুভুক্ষিত দেবতারা, তৃষিত পিতৃলোকেরা আসিয়া তখন ইহার সুতিকাগারকে জনাকীর্ণ করিয়া তোলেন। মা, তুমি জান না যে তোমার শয্যাতল তখন সকল তীর্থের সারতীর্থ হইয়া দাঁড়ায়।

 তোমরা এই ক্ষুদ্র নবজাত প্রাণকে একরত্তি মানুষ, এক মুঠো মাংস পিণ্ড দেখিয়া অবজ্ঞা করিতে পার। কিন্তু সর্ব্বজ্ঞ দেবতারা জানেন এই একরত্তি জীব, এই এক মুঠো রক্ত মাংস বস্তু কি? তাঁরা জানেন এই এক বিন্দু প্রাণ, আজ বিশান বিশ্বের অনাদি সঞ্চিত কর্ম্মফলের বোঝা মাথায় করিয়া এই পৃথিবীতে আসিয়াছে।

 একঃ প্রজায়তে লোকঃ একোহনুভুঙক্তে সুকৃতমেক এবচ দুষ্কৃতং।

 জীব একাকী জন্মগ্রহণ করে, একাকীই সুকৃত দুষ্কৃত ভোগ করে- কথা মিথ্যা নহে। কিন্তু সে একাকী হইলেও, অগণ্য জীবের কর্ম্মফলের বোঝা মাথায় লইয়া জন্মিয়া থাকে। এই তো তার মহত্ব, একাকী জন্মিয়া সে বহুজীবের, বহুযুগের সঞ্চিত কর্ম্ম ক্ষয় করিতে প্রবৃত্ত হয়। খৃষ্টীয়ানেরা বলেন, বিশ্বপিতা পরমেশ্বর পাপী জগতের পরিত্রাণের জন্য, আপনার একমাত্র পুত্রকে বলিদান করিয়াছেন। অজ্ঞলোকে ভাবে, জগতের ইতিহাসে, দুই হাজার বৎসর পূর্ব্বে, জুদিয়াভূমে, ক্যালাভেরী ক্ষেত্রে, এক বার মাত্র এই পবিত্র প্রায়শ্চিত্তের এই মহান পুরুষ-ষজ্ঞের অনুষ্ঠান হইয়াছিল। কিন্তু ভক্ত জ্ঞানীরা জানেন যে এ প্রায়শ্চিত্ত,