পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
দ্বিতীয় চিন্তা

কেবল একবার মাত্র হয় নাই। জগতের আদি হইতে, পুরুষ পরম্পরায় এই পবিত্র প্রায়শ্চিত্ত, এই মহান পুরুষ-যজ্ঞ সকল দেশে সকল সমাজে নিয়ত অনুষ্ঠিত হইয়া আসিতেছে। প্রত্যেক জীবের জীবন আবরণ, এই মহাযজ্ঞের অনুষ্ঠান করে। প্রত্যেক প্রাণী সমুদায় বিশ্বের কর্ম্মফল ভোগ করিতে জন্মগ্রহণ করিয়া, এই প্রায়শ্চিত্তের সাধন করে। প্রাণী মাত্রেই, জগতের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবার জন্য, এ সংসারে জন্ম লইয়া থাকে। কারো ভগ্যে এ কার্য্যসমাধা হয়, কারো ভাগ্যে বা হয় না, কিন্তু সকলেই এই মহাযজ্ঞের স্বধা রূপে বিশাল বিশ্বের নিথিল কর্ম্মকুণ্ডে, বিশ্বপিতা বিধাতাপুরুষ কর্তৃক, আহুতি প্রদত্ত হইতেছে। কবে কোন্‌ ঐতিহাসিক যুগে, কোন্ অজ্ঞাত কারণে, মাতা বসুন্ধরা একবার বিক্ষুব্ধ হইয়া, কোথায় কি বিষরাশি উদিগরণ করিয়া ছিলেন, তারই জন্য পৃথিবীর সে সকল ভূভাগ আজি পর্য্যন্ত বিষধর বীজানুপুঞ্জে পরিপূর্ণ হইয়া আছে। এই সকল ভূভাগে যেই জন্মা’ক না কেন, সেই যে বসুধার এই প্রাচীনকৃত কর্ম্মবোঝ মাথায় লইয়া আসে, এবং আমরণ এই প্রাণনাশী জীবানুঞ্জের সঙ্গে যুঝিয়া সেই প্রাচীন পাপেরই প্রায়শ্চিত্ত করে,—ইহা কি সত্য নহে? কেন যে মাঝে মাঝে সূর্য্য দেহে স্ফোটক প্রকাশিত হয়, পণ্ডিতেরা এখনো ইহার তত্ত্ব আবিষ্কার করিতে সমর্থ হন নাই; কিন্তু এই সকল সৌর স্ফোটক বা sunspot এ পৃথিবীর আবহাওয়ার যে বৈলক্ষণ্য ঘটিয়া থাকে একথা প্রত্যক্ষ করিয়াছেন। এই সৌরস্ফোটক নিবন্ধন বায়ুমণ্ডলের স্বভাব বিপর্য্যয় যখন ঘটে, তখন যে প্রাণীই সে বায়ুমণ্ডলে জন্মগ্রহণ করুক না কেন, সবিতার এই কর্ম্মফলের বোঝা সল্পবিস্তর পরিমাণে তাহাকে বহিতেই হয়। মাটির দোষগুণ যে কেবল উদ্ভিদেই ফুটিয়া উঠে, তাহা নহে;—প্রাণীকেও পূর্ণমাত্রায় তাহার ভাগী হইতে হয়। জলের দোষগুণ, বায়ুর দোষগুণ,রূপঞ্চমহাভূতের সমুদায় সুকৃত দুস্কৃতের