বাঁধিতে চাহে, পুরুষ কর্ম্মকে রোধিতে চাহেন; —ইহাই তো, তাহা হইলে, সংসারের মর্ম্ম হয়। আর জীবন যদি এই নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামেরই নামান্তর হয়, তবে সংগ্রামের জয়-পরাজয়ে দুঃখ, বেদনা ও অনুশোচনার অবসর থাকে বটে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অনুতাপের অবসর কোথায়? আর পুরুষ যখন একদিন না একদিন আপন কর্ম্মকে অভিভূত করিয়া, কর্ম্মচক্রের বহির্ভূতে, নির্বাণ লাভ করিবেই করিবে, তখন দুদিনের শক্তি পরীক্ষায় কর্ম্ম বা প্রবৃত্তি যদি তাহার উপরে জয়লাভই করে, তাতেই বা কি আসে যায়? আর এও তো সত্য যে পুরুষের ধর্ম্ম ও নিয়তি যেমন মুক্তি ও নির্ব্বাণ, কর্মেরও তো ধর্ম্ম এবং নিয়তি সেইরূপ ক্ষয় ও বিলোপ। কর্ম্ম আপনি আপনাকে ক্ষয় করে। তাহা না করিলে পুরুষ কখন মুক্তিলাভ করিতে পারিত না; আর করিলেও, সে মুক্তি সার্ব্বজনীন হইত না, কেহ বা আকস্মিক ঘটনায় কখন কর্ম্মবন্ধন ছেদন করিতে পারিত, অনেকে অনন্তকালই তাহাতে আবদ্ধ হইয়া পড়িয়া থাকিত। সংসারবন্ধন মোচন তবে শুদ্ধ আকস্মিক ঘটনার অধীন হইত, পুরুষেরও অধীন নহে, ঈশ্বর যদি থাকেন, তাঁহারও অধীন নহে। কিন্তু সংসারকে তো কখনও এমন নিরীশ্বর বলিয়া ভাবি নাই। আর যে ভাবেই দেখি না কেন, এ দীর্ঘজীবনে যাহা ঘটিয়াছে, যাহা হারাইয়াছি, যাহা পাইয়াছি, তার এক কণাও আমি পরিবর্তন করিতে পারিতাম না; পারিলেও, ঠাকুর, পশ্চাৎ দিকে চাহিয়া এখন নিঃসংকোচে বলি,—এক কণাও তার পরিবর্ত্তিত করিতাম না। এই কারণেই জীবনের সুখ দুঃখ, আশা নিরাশা, পাপ পুণ্য, ভাল মন্দ, সকলের জন্য তোমাকে সরল হৃদয়ে ধন্যবাদ করি।
পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৬৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
তৃতীয় চিন্তা