দ্বিতীয় অধ্যায়
জীবনের হিসাব নিকাশ
“পঞ্চাশোর্দ্ধে বনং ব্রজেৎ”—— বাণপ্রস্থ অবলম্বনের সময় প্রায় সমুপস্থিত। এ সময়ে জীবনের একটা হিসাব নিকাশ করিবার ইচ্ছা স্বাভাবিক তাই এই আত্ম-জীবন কাহিনী লিখিতে প্রবৃত্ত হইলাম।
মনে মনে, গোপনে, আত্মচিন্তাতে এ হিসাবনিকাশ করিলেই তো হয়, তাহা আবার কাগজে কলমে লিখার প্রয়োজন কি? প্রয়োজন আছে। প্রথমতঃ আর যে পারে পারুক, আমি কোন গভীর চিন্তাই মনে মনে করিতে পারিনা। প্রকাশের প্রয়াসেই আমার চিন্তা পরিস্ফুট হয়, অভিব্যক্তির চেষ্টাতেই আমার অন্তরের ভাব বিকশিত হইয়া উঠে। আপনার মনোভাবকে যখন আপনি দেখিতে চাই, তখনই তাহাকে ভাষায় প্রকাশিত করিতে হয়। এই জন্যই লেখা ও বলা আমার প্রকৃতিগত হইয়া আছে। এই জন্য বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়া অবধি যখনই যাহা লিখিয়াছি, বা যখনই যাহা বলিয়াছি, তার প্রথম পাঠক ও প্রথম শ্রোতা ত আমি নিজেই হইয়াছি। আমি সততই নিজের জ্ঞানলাভের জন্য, নিজের উদ্দীপনার জন্ম, নিজের শিক্ষার জন্য, নিজের উন্নতির ও নিজের তৃপ্তির জন্য, লিখিয়াছি ও বলিয়াছি। এই কারণে অনেক সময় আমার লেখা ও বলা অপরের নিকট দুর্ব্বোধ্যও হইয়া গিয়াছে। আমি নিজের বোধগম্য হইবার জন্য যে ভাষা আবাক হইয়াছে, তাহাই সতত ব্যবহার করিয়াছি, নিজে যাহা কিছু অধিগত করিয়াছি, তাহার বিবৃতি বা পুনরুক্তি করি নাই, প্রয়োজন হইলে, কেবল উল্লেখমাত্র করিয়াছি। এই জন্য যাঁহারা অন্য ভাবের ভাবুক, যাঁরা অন্য ধাপের বা ধাতের লোক, তাঁদের বোধগম্য করিবার কোন