প্রয়াস কোনদিন পাই নাই, এবং তাঁহাদের নিকট আমার কথা ও লেখা অনেক সময় জটিল ও অবোধ্য রহিয়া গিয়াছে।
ফলতঃ আমার লেখাতে ও বলাতে সর্ব্বদাই আমি নিজেকে শিষ্যরূপে দেখিয়াছি। গুরু যে কে, তাহা ভাল করিয়া ধরিতে পারি নাই। তবে ইহা অসংখ্যবার উপলব্ধি করিয়াছি যে কে যেন অন্তরঙ্গ হইতে, আমার লেখনী বা রসনাকে অবলম্বন করিয়া আমাকে অনেক অদ্ভূত সত্য শিক্ষা দিতেছেন। এজন্য লোকে যাহাকে আমার রচনা বা আমার উক্তি বলিয়া ব্যক্ত করিয়াছে, তাহা দেখিয়া ও শুনিয়া আমি নিজেই চমকিত ও মুগ্ধ হইয়া গিয়াছি এবং নিজের লেখা পড়িতে পড়িতে নিজেই কত সময় বিস্ময়ে, আনন্দে ভগবৎ-কৃপা ও ভগবৎ-প্রেরণা প্রত্যক্ষ করিয়া অজস্র অশ্রুবিসর্জ্জন করিয়াছি।
মনোমধ্যে মনোভাব স্বপ্নের মত, বায়ুর মত, আকাশে তাড়িত বিচ্ছিন্ন মেঘখণ্ড সকলের মত অস্পষ্ট, অস্পৃশ্য ও অগ্রাহ্য ও চঞ্চল হইয়া বিচরণ করে। এই মনোভাবকে যখন ভাষার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করি, তখন তাহা স্থির হইয়া আত্মস্বরূপ প্রকাশিত করিতে থাকে। ভাষার আবরণে আবৃত হইতে যাইয়া যাহা অসম্বন্ধ ছিল, তাহা সুসম্বন্ধ ও ঘননিবিষ্ট হয়, যাহা একাকী ছিল, তাহা অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হইয়া, আপনার যথাযথ ওজন বুঝিয়া সংযত হয়; যাহা অসত্য তাহা পরিহৃত, যাহা সত্য তাহা যুক্তিপ্রতিষ্ঠ, ও যাহা সত্যাভাব মাত্র ছিল, তাহা সুস্পষ্ট হইয়া উঠে। ভাষার মুকুরেই সত্যের আত্মস্বরূপ ও চিন্তার নিজমূর্তি পরিষ্কাররূপে প্রতিবিম্বিত হয়। মনোগত চিন্তা ও ভাব যখন ভাষাতে অভিব্যক্ত হয়, তখনই আমরা তাহার স্বরূপ সাক্ষাৎকার লাভ করি। এই জন্য নিজ জীবনের স্বরূপ যদি দেখিতে হয়, তাহাকে ভাষায় অভিব্যক্ত করা আবশ্যক হইয়া উঠে। আত্মজীবন কাহিনী রচনার এক প্রয়োজন ইহা। এ প্রয়োজন আমার নিজস্ব। দর্পণাস্তে জীব যেমন নিজ মূর্ত্তি দেখে, এই কহিনীতে