পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নিজের কথা
৬৩

তেমনি আমি আমার এই অর্দ্ধশত বর্ষব্যাপী জীবনের স্বরূপ-ছবি দেখিতে পাইব, এই বাসনা হইতেই এই চেষ্টার জন্ম।

 কিন্তু নিজের কথা লিখিতে লোকে সহজেই শঙ্কিত হয়। এ সঙ্কোচ স্বাভাবিক। যদি নিজের কথা সত্য সত্য নিজেরই কথা বলিয়া ভাবিতাম, তবে আমিও কখনও এ কাহিনী লিখিতে বসিতাম না। কিন্তু নিজের কি আছে? নিজের কা’কে বলিব? এ জীবন কি আমার না তোমার? আমরা কি জীবনের কর্তা? যদি তা হয়, তবে হয়ত আত্মকথা বিবৃতিতে দোষ আছে। কিন্তু সত্য তো এ নয়। এ জীবনের যদি কোন শিক্ষা প্রত্যক্ষভাবে, উজ্জ্বলরূপে লাভ করিয়া থাকি, তাহা এই যে ইহা আমার নিজের নহে। এ জীবনের কর্ত্তা আর একজন, সে জন যেই হউক না কেন। তাঁরে চিনি এমন কথা বলি না। তাঁরে যে একবারেই চিনি নাই, এমনও বলিতে পারি না। এ জীবন তাঁরই খেলা। ইহার প্রভু, নিয়ন্তা, কর্ত্তা সকলি সে জন। এ জীবনের কথা নিজের কথা নয়, তাঁরই কথা।

 আর যদি নিজেরই ভাবিতাম, তাহা হইলেও এ কাহিনী লিখিতে সঙ্কুচিত হইতাম না। এতদিন ধরিয়া এই জীবন ভোগ করিলাম, এত দীর্ঘকাল এই আমির সঙ্গে বসবাস করিলাম, কিন্তু তাকে ভাল করিয়া তো কখনো একবার প্রত্যক্ষ করিলাম না। সমাধিতে যে আত্মসাক্ষাৎকার হয়, সাধুমুখে শুনিয়াছি, সে প্রত্যক্ষের কথা বলিতেছি না। কিন্তু সাধারণভাবে যাকে দেখা বলে, সে ভাবেও তো নিজেকে কখনো ভাল করিয়া দেখিলাম না। এ জীবনে কত লোকের সঙ্গ করিলাম, কত সম্বন্ধে আবদ্ধ হইলাম, পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, কত লোককে দেখিলাম, বুঝিলাম, কত লোকের জীবনগ্রন্থ অধ্যয়ন করিয়া কত সুখ, কত শিক্ষা লাভ করিলাম; আর কেবল নিজের জীবনই দেখিলাম না, পড়িলাম না, ইহার যে শিক্ষা