পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
তৃতীয় চিন্তা

তাহাই ভাল করিয়া ধরিলাম না। এও কি ক্ষোভের কথা নহে? আর এ জীবনকে যদি দেখিতে হয়, তবে ইহাকে বাহিরে, চক্ষের উপরে, অপরের জীবনের মত ধরিতে হইবে। ইহার জ্ঞানলাভ করিতে গেলে, ইহাকে ধ্যানের বিষয় করিতে হইবে। আর তাহা করিতে গেলেই, ইহার যথাযথ ছবি আঁকিয়া নিজের মনের সম্মুখে স্থাপন করা প্রয়োজন। আপনাকে আপনা হইতে পৃথক্ করিয়া না ধরিলে, কখনই আপনাকে আপনার জ্ঞানের বিষয়ীভূত করা যায় না। জ্ঞেয়কে জ্ঞাতা হইতে পৃথক্ করিয়াই জ্ঞানের সূত্রপাত হয়। এই জন্যও নিজেকে সত্যভাবে, সম্পূর্ণভাবে, জানিতে গেলে আপনার জীবনের যথাযথ চিত্র অঙ্কিত করিয়া আপনার সমক্ষে ধারণ করা আবশ্যক। সকল জ্ঞানের সেরা জ্ঞান আত্মজ্ঞান। এই আত্মজ্ঞান লাভের জন্য, আত্মজীবন-কাহিনী রচনা করিয়া, ধ্যানসহকারে তাহা অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। ইহাতে লজ্জার বা সঙ্কোচের বিষয় কি আছে?

 এইরূপভাবে আপনার জীবনী রচনার চেষ্টাতে আরো ফল আছে। তাহাতে জীবন ফুটিয়া উঠে। এইরূপ প্রয়াসে যাহা অস্পষ্ট ছিল, তাহা সুস্পষ্ট হইয়া উঠে; যাহা অব্যক্ত ছিল তাহা ব্যক্ত হয়; যাহার মর্ম্ম অজ্ঞাত ছিল, তাহার অর্থ প্রকাশিত হইয়া পড়ে। ইহা অভিব্যক্তির সাধারণ ধর্ম্ম। মনে মনে, গোপনে গোপনে, আত্মচিন্তাতে আপনাকে যতটা পরিষ্কাররূপে জানা যায়, ভাষায় সে চিন্তাকে যথাযথরূপে ব্যক্ত করিতে পারিলে, তদপেক্ষা অনেক পরিষ্কার করিয়া আপনাকে দেখা যায়, ও বোঝা যায়। লোকে বলে, ভাষায় চিন্তা ও ভাব হাল্‌কা হইয়া পড়ে। কখনো কখনো হয়ত এরূপ হইয়া থাকে। কিন্তু তাহার কারণ অভিব্যক্তির চেষ্টা নহে, কিন্তু অভিব্যক্তার অক্ষমতা। আবার কখন কখন এমন বস্তুও আমাদের চিন্তার ও ভাবনার বিষয়ীভূত হইয়া থাকে, যাহা কেবলমাত্র প্রতিবোধগম্য, গভীর আত্মপ্রত্যয় লব্ধ, যাহাকে