প্রকাশ করিবার শক্তি ভাষা এখনো লাভ করিতে পারে নাই, প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনেই স্বল্পবিস্তর পরিমাণে এইরূপ কোন কোন গভীরতম অভিজ্ঞতা থাকে, যাহা কথায় ব্যক্ত হয় না। এসকল কথা জীবনের অতিশয় অন্তরঙ্গ কথা তার চিত্র কোন পটে উঠে না। সে তত্ত্ব প্রকাশ করে, এমন জ্যোতি জগতে নাই।
ন তত্র সূর্য্যো ভাতি ন চন্দ্রতারকং
নেমা বিদ্যুতো ভান্তি কুতোহয়মগ্নিঃ।
তমেব ভান্তমনুভাতি সর্ব্বং
তস্য ভাসা সর্ব্বমিদং বিভাতি॥
সে গভীর আত্মতত্ত্ব, যেখানে জীব-ব্রহ্ম একীভূত হইয়া বাস করিতেছেন, যে আত্মতত্ত্ব ব্রহ্মতত্ত্বকে প্রকাশ করে,—তাহা বর্ণনা করে সাধ্য কার? প্রাকৃতজনের তাহা সাধ্যাতীত। কিন্তু জীবন যাহাকে বলি, তাহা এ গভীর আত্মতত্ত্বের উপরে প্রতিষ্ঠিত হইলেও, তাহার বাহিরে, তাহার বহিরঙ্গরূপেই, বিরাজ করে। কেবল ইহারই চিত্রাঙ্কণ, ইহারই বর্ণনা, ইহারই প্রতিকৃতির অভিব্যক্তি সম্ভবপর।
প্রত্যেক জীবনেই, সমান্তরাল ভাবে, নিয়ত দুই লীলাতরঙ্গ প্রবাহিত হইতেছে। এক অন্তরঙ্গ লীলা, আর এক বহিরঙ্গ লীলা। অন্তরঙ্গ লীলার উপরেই বহিরঙ্গ লীলা প্রতিষ্ঠিত সত্য, কিন্তু সে লীলা অনুভব করা, তাহা প্রত্যক্ষ করা সুকঠিন, বহু সাধন-সাপেক্ষ। এই অন্তরঙ্গ ক্ষেত্রে ভগবান আপনার জীব-প্রকৃতির সঙ্গে নিত্য-লীলাতে নিযুক্ত। এই জীব-প্রকৃতি তাঁর লীলার নিত্য সহচরী। আমরা সচরাচর যাহাকে আমি আমি বলি, তাহা এই জীব-প্রকৃতির অংশ, তারই প্রতিবিম্ব বটে; কিন্তু তদপেক্ষা অনেক নিম্ন ভূমিতে বাস করিতেছে।