পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
তৃতীয় চিন্তা

অজামেকং লোহিত শুক্ল কৃষ্ণাং
বহবীঃ প্রজাঃ সৃজমানং সরূপাম।
অজো হ্যেকো জুষমানৌহমুশেতে
জহাত্যেনাং ভুক্তভোগামজেহন্যঃ॥

 উপনিষদ এখানে তিন নিত্যতত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করিতেছেন। এক প্রকৃতি সত্ত্ব রজ তম গুণান্বিতা,—লোহিত শুক্ল কৃষ্ণাং—দ্বিতীয় জীবাত্মা যিনি এই প্রকৃতি দ্বারা সেবিত হইয়া তাহাকে ভোগ করেন; জুষমানৌহমুশেতে; আর তৃতীয় পরমাত্মা যিনি ভোক্তা ও ভোগ্য এই উভয় হইতে পৃথক্ হইয়া, জহাত্যেনাং ভুক্তভোগাম, ইহাদেরই সঙ্গে নিয়ত বাস করিতেছেন।

 পরবর্ত্তী শ্রুতিতেই জীবাত্মা ও পরমাত্মার নিত্য-লীলা বর্ণিত হইয়াছে।

দ্বা সুপর্ণা সযুজা সখায়া
সমানং বৃক্ষং পরিষস্বজাতে
তপরয়ো নঃ পিপ্পলং স্বাদ্বত্ত্য
নশ্নম্নন্ন্যোহ ভিচাবশীতি ॥

 দুই পাখী, পরস্পরের সঙ্গে নিত্যযুক্ত ও সখ্যবদ্ধ হইয়া এক বৃক্ষ আশ্রয় করিয়া আছেন। ইহার একটা সুস্বাদু ফল ভক্ষণ করেন, অপরটি আপনি অভুক্ত থাকিয়া কেবল দর্শন করেন মাত্র। এই জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার কখন বিচ্ছেদ হয় না—ইহারা উভয়ে “সযুক্তা” হইয়া আছেন। আর ইহাঁদের প্রেমলীলারও বিরাম হয় না—ইহারা পরস্পরের সঙ্গে নিত্য সখ্যবদ্ধ। এই যুক্ত ও সখ্য অবস্থা সজ্ঞান অবস্থা। জীবাত্মা যদি অজ্ঞান হইয়া পড়ে, তবে যোগের ব্যাঘাত হয়, প্রেমবন্ধনও ছিন্ন হইয়া যায়।