পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জোড়াসাঁকোর ধারে
১৩৩

 নন্দলাল বললে, ‘আপনি বলে গেলেন উমাকে সাজাতে। সারারাত আমিও সে কথা ভেবেছি, এখনো ভাবছিলাম রঙ দেব কি না।’

 কি সর্বনাশ করতে যাচ্ছিলুম বল দেখি। আর একটু হলেই অত ভালো ছবিখানা নষ্ট করে দিয়েছিলুম আর কি। সেই থেকে খুব সাবধান হয়ে গেছি। আর এটা জেনেছি যে, ছবি যার যার নিজের নিজের সৃষ্টি, তাতে অন্য কেউ উপদেশ দেবে কি?

 যখন আমাদের ভারতশিল্পের জোর চর্চা হচ্ছে তখন ভাবলুম যে, শুধু ছবিতে নয়, সব দিকেই এর চর্চা করতে হবে। লাগলুম আসবাবের দিকে, ঘর সাজাতে, আশেপাশে চারদিকে ভারতশিল্পের আবহাওয়া আনতে। ঘরে যত পুরোনো আসবাব ছিল কর্তাদের আমলের, বিদেশ থেকে আমদানি দামী দামী জিনিসপত্তর, সব বিক্রি করে দিলুম। বললুম, ‘সব ঝেড়ে ফেল্‌, যা কিছু আছে বাইরে ফেলে দে।’ মাদ্রাজী মিস্ত্রি ধনকোটি আচারি, তাকে এনে লাগিয়ে দিলুম কাজে। নিজে নমুনা দিই, নকশা দিই, আর তাকে দিয়ে আসবাব করাই। সব সাদাসিধে আসবাব করাই। তাকে দিয়ে ঘর জুড়ে জাপানী গদি করালুম। এই যে আজকাল তোমরা খাটের পায়া দেখছ, এ কোত্থেকে নেওয়া জানো? মাটির প্রদীপের দেল্‌খো থেকে। খেটেছি কম? প্রথম ভারতীয় আসবাবের চলন তো এইখান থেকেই হল। একলা আমি আর দাদা, এই আমাদের সব দিক সামলে চলতে হয়েছে; এখন এরা সবাই একটি ধারা পেয়ে গেছে। এ থেকে একটু আধটু নতুন কিছু এদিক ওদিক করতে পারা সহজ। কিন্তু আমাদের যে তখন গোড়াসুদ্ধ গাছ উপড়ে ফেলে নতুন গাছ লাগাতে হয়েছিল নিজের হাতে। চারা লাগানো থেকে জল ঢালা থেকে সবই আমাদেরই করতে হয়েছে। তাকে বাঁচিয়ে রেখেছি বলেই হয়তো তাতে একদিন ফুল ফোটাতে পারবে।


১৮

 ছেলেবেলায় পুরীর পাণ্ডাঠাকুর আসত বাড়িতে, বছরে একবার। এলেই জগন্নাথ দেখবার ইচ্ছে জাগত মা পিসিমা ছেলেমেয়ে দাসী পাড়াপড়শি সকলেরই মনে। সে যে কি ঔৎসুক্য জগন্নাথ দেখবার। পাণ্ডাকে ঘিরে বলতে থাকতুম, ‘ও পাণ্ডাঠাকুর, কবে ঠাকুর দেখাবে বল না।’ দাসীরা একজন করে বেরিয়েও পড়ত তার সঙ্গে।

 তার অনেক কাল পরে, বড় হয়েছি ছেলেপিলে নাতিনাতনি হয়েছে,