দেউতা বলে ওরা ভূতকে। বলি, ‘ওকি, লণ্ঠন হাতে দেউতা কি রে।’
খানিক বাদে দেখি ঘোড়ায় চড়ে একটা সাহেব টুপি মাথায় পাশ কাটিয়ে গেল।
‘বাবু, তুমি শুয়ে পড়।’ বলে শুধু বেহারারা।
শুনেছিলুম কোন্ এক মিলিটারিকে ওখানে মেরে ফেলেছিল, ভূত হয়ে সে ফেরে, অনেকেই দেখে।
রাত্তিরবেলা লণ্ঠন হাতে লোকটাকে দেখে আমার বরং ভালোই লেগেছিল।
যাক, এই করতে করতে এসে পৌঁছলুম সমুদ্রের ধারে কি একটা মন্দিরের কাছে, মেয়েরা সব নেমে দেখতে গেল। ছোট্ট একটি পাহাড়ের মতো, তার উপরে ছোট্ট মন্দিরটি। মণিলাল ছিল সঙ্গে, তাকে বললুম, ‘ঠিক আছ তো সবাই। এইবার তবে আমি একটু পাশ মোড় দিয়ে নিই।’ তারপর আমার পালকি পড়ল গিয়ে একেবারে কোনারকের ধারে। সিন্ধুতটে চলেছে পালকি হু হু করে। দরজা খুলে দেখলুম ঢেউগুলো পাড়ে এসে পড়ছে, আবার চলে যাচ্ছে পালকির নিচে দিয়ে। জলে ফসফরাস, ঢেউ আসে যায়, যেন একটা আলো চলে যায়। মনে হয় সমুদ্রের উপর দিয়ে ভেসে চলেছি, দানবরা কাঁধে করে নিয়ে চলেছে আমায়।
এইভাবে চলবার পর আবার একটা পালকি হু হু করে চলে গেল সামনে দিয়ে কোনারকের মন্দিরের দিকে, সঙ্গে আবার লণ্ঠন। ও কি, পালকি ওদিকে কোথায় গেল। নেমে দেখলুম আমাদের চারটে পালকি ঠিকই আছে। তবে ওটা কি?
বেহারারা ওই এক কথাই বলে, ‘দেখো না বাবু, তুমি শুয়ে পড়। কি দেখলুম তা হলে ওটা? মরীচিকা না কি কে জানে, তবে দেখেছিলুম ঠিকই। সকাল হয়ে গেছে, ভয় নেই। মণিলালদের জিজ্ঞেস করলুম, ‘দেখেছ কিছু?’
বললে, ‘না।’
ভূতুড়ে কাণ্ড দেখে কোনারকের মন্দিরে পৌছলুম। মেয়েরা নেমেই মন্দির দেখবে বলে ছুটল।
কোনারকের মত অমন সুন্দর সমুদ্র পুরীর নয়। গেলুম ধারে, আহা, যেন আছোঁয়া বালি সাদা জাজিমের মত বিছানো, তার কিনারায় নীল গভীর সমুদ্র। মানুষকে কাছে যেতে দেয় না। যেন বিরাট সভা, মানুষ সেখানে প্রবেশ করতে পারে না সহজে। তার ওদিকে সোনার ঘটের মত সূর্য উঠছে, সামনে সূর্যমন্দির। সূর্যোদয়ের আলোটা পড়ে এমন ভাবে, যেন সূর্যদেব উঠে এসে রথের