পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৩২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
জোড়াসাঁকোর ধারে
২৫

অন্ধকার। দিনের বেলায় চাটুজ্যে মশায় বলেছিলেন, আজ রাত্তিরে কাঁঠালতলায় কাঠবেড়ালির বিয়ে হবে। রাত জেগে দেখছি চেয়ে, কাঁঠালতলায় যেন সত্যি কাঠবেড়ালির বিয়ে হচ্ছে, খুদে খুদে আলোর মশাল জ্বালিয়ে এল তাদের বরযাত্রী বরকে নিয়ে, মহা হৈ-চৈ, বাদ্যভাণ্ড, দৌড়োদৌড়ি, হুলুস্থুলু ব্যাপার। সব দেখছি কল্পনায়। কাঁঠালতলায় যে জোনাকি পোকা জ্বলছে তা তখন জ্ঞান নেই।

 সেই সেবার কোন্নগরে আমি কুঁড়েঘর আঁকতে শিখি। তখন একটু আধটু পেনসিল নিয়ে নাড়াচাড়া করি, এটা ওটা দাগি। বাগান থেকে দেখা যেত কয়েকটি কুঁড়েঘর। কুঁড়েঘরের চালটা যে গোল হয়ে নেমে এসেছে, তা তখনই লক্ষ্য করি। এর আগে আঁকতুম কুঁড়েঘর—বিলিতি ড্রইং-বইএ যেমন কুঁড়েঘর আঁকে। দাদাদের কাছে শিখেছিলুম এক সময়ে। বাংলাদেশের কুঁড়েঘর কেমন তা সেইবারই জানলুম, আর এ পর্যন্ত ভুল হল না।

 কোন্নগরে কতরকম লোক আসত। এক নাপিত ছিল, সে পোষা কাঠবেড়ালির ছানা এনে দিত; খালি বাবুইয়ের বাসা জোগাড় করে এনে দিত। কোনোদিন বহুরূপী এসে নাচ দেখাত। কত মজা। কিছু কিছু পড়াশুনোও করতে হত, শুধু খেলা নয়। গোকুলবাবু পড়া নিতেন আমাদের, বাংলার ইতিহাস মুখস্থ করাতেন। টেবিলের উপরে একটি কাচের গেলাসে আফিমের বড়ি ভিজছে, জলটা লাল হয়ে উঠেছে; ওদিকে মা, ওঁরা বারান্দার বাইরে ছোট চালাঘরে রান্না করছেন। বাবামশায়রা কাঁঠালতলায় গল্পগুজব করছেন, চৌকি পেতে বসে। আমরা মুখস্থ করছি বাংলার ইতিহাসে সিরাজদৌল্লার আমল। একদিন রীতিমত প্রশ্ন লিখে বাবামশায়ের সামনে আমাদের পরীক্ষা দিতে হল; সেই পরীক্ষায় জানো আমি ফার্স্ট প্রাইজ পেয়ে গিয়েছিলুম সমরদাকে টেক্কা দিয়ে, চালাকি নয়। পেয়েছিলুম মস্ত একটা বিলিতি অর্গ্যান বাজনা, এখনও তা আছে আমার কাছে। গানও শিখেছিলুম তখন একটি ওই বুড়ো চাটুজ্যেমশায়ের কাছে।

হায় রে সাহেব বেলাকর
আমি গাই দেব তুই বাছুর ধর্‌।
ওটি শিষ্ট বাছুর, গুঁতোয় নাকো
কান দুটো ওর মুচড়ে ধর্‌।
হায় রে সাহেব বেলাকর॥

 এই আমার প্রথম গান শেখা। ব্লাকইয়র সাহেব রোজ ঘোড়ায় চড়ে বেড়িয়ে