গেছে। কি বস্তু জোড়াসাঁকোর বাড়ি বুঝে দেখো। কারাগার হলেও সে মনোরঞ্জন। জোড়াসাঁকোর পারে ধরা ‘মনোরঞ্জন কারাগার’।
৬
পলতার বাগান মনে প’ড়ে দুঃখও পাচ্ছি আনন্দও পাচ্ছি। কতই বা বয়েস তখন আমার। বেশ চলছিল, হঠাৎ একদিন সব বন্ধ হয়ে গেল, ঘরে ঘরে তালা পড়ল। বড়পিসেমশায় ছোটপিসেমশায় আমাদের সবাইকে নিয়ে বোটে রওনা হলেন। দারুণ ঝড়, নৌকো এ-পাশ ও-পাশ টলে, ডোবে বুঝি বা এইবারে। বড়পিসিমা ছোটপিসিমা আমাদের বুকে আঁকড়ে নিয়ে ডাকতে লাগলেন, ‘হে হরি, হে হরি!’ এলুম আবার জোড়াসাঁকোর বাড়িতে। দোতলার নাচঘরে ছিল জ্যেঠামশায়ের বড় একখানি অয়েলপেণ্টিং, বসে আছেন সামনের দিকে চেয়ে। ছোটপিসিমা বড়পিসিমা আছড়ে পড়লেন সেই ছবির সামনে, ‘দাদা, এ কী হয়ে গেল আমাদের!’
অদ্ভুত কাণ্ড। যেন চলতে চলতে হঠাৎ সামনে একটা দেয়াল পড়ে গেল; সব কিছু থেমে গেল, ঘড়িটা পর্যন্ত। বড় হয়ে যখন গেলুম পলতার বাগানে, দেখি, বাবার সেই শোবার ঘর ঠিক তেমনি সাজানো আছে, একটু নড়চড় নেই—দেয়ালে ঘড়িটি ঠিক কাঁটায় কাঁটায় স্থির, বাবামশায়ের মৃত্যুর সময়টি তখনও ধরে রেখেছে। ঘরজোড়া মেঝেতে সাদা গালচে, তার নকশাটা যেন পাথরের চাতালে ফুলপাতা হওয়ায় খসে পড়েছে। দেয়ালে বেলোয়ারি কাচে রঙিন সব ফুলের মালা, বাতিনেবা গোলাপি রঙের ফটিকের ঝাড়, দেয়ালগিরি, পর্দা, সবই যেন তখনও একটা মহা আনন্দ-উৎসব হঠাৎ শেষ হয়ে যাওয়ার ম্লান বিশৃঙ্খল রূপ ধরে রয়েছে। মা সেখানকার কোনো জিনিস আনতে দেননি। কিন্তু সেই ঘড়িটি সেবারে আমি নিয়ে আসি, এখনও আছে বেলঘরিয়ার বাড়িতে। আশ্চর্য ঘড়ি—কেমন আপনি বন্ধ হয়ে যায়। সেদিনও বন্ধ হয়ে গেল অলকের মা যেদিন চলে গেলেন, ঠিক জায়গায় কাঁটার দাগ টেনে। অলকরা চাবি ঘোরায় ঘড়ি চলে না। অলককে বললুম, ‘ও ঘড়ি তোরা ছুঁসনে, তোদের হাতে বিগড়ে যাবে। আমার সঙ্গে ওর অনেক কালের ভাব। আমি জানি ওর হাড়হদ্দ; আমার কাছে দে দেখি নামিয়ে।’ ঘড়িটি নামিয়ে এনে দিলে কাছে। আমি তাতে হাত দেবা মাত্র ঘড়ি নতুন করে আবার চলতে লাগল। বহুকালের