এক বাসায় ধরে দেয় মন-পাখিটিও আমার ঠিক সেইভাবে সংগ্রহ করে চলে যা-তা। সেই সব সংগ্রহ তুমি হিসেব করে গুছিয়ে লিখতে চাও লেখো, আমি বলে খালাস।
রোজ বেলা তিনটে ছিল মেয়েদের চুলবাঁধার বেলা। কবিত্ব করে বলতে হলে বলি, প্রসাধনের বেলা। আমাদের অন্দর ও রান্নাবাড়ির মাঝে লম্বা ঘরটায় বিছিয়ে দিত চাকরানীরা চুলবাঁধার আয়না মাদুর আরও নানা উপকরণ ঠিক সময়ে। মা পিসিমারা নিজের নিজের বউ ঝি নিয়ে বসতেন চুল বাঁধতে।
বিবিজি বলে এক গহনাওয়ালী হাজির হত সেই সময়ে—কোন্ নতুন বউয়ের কানের মুক্তোর দুল চাই, কোন মেয়ের নাকের নাকছাবি চাই, খোঁপায় সোনারুপোর ফুল চাই, তাই জোগাত। চুড়িওয়ালী এসে ঝুড়ি খুলতেই তুলতুলে হাত সব নিসপিস করত চুড়ি পরতে। ছোট ছোট রাংতা দেওয়া গালার চুড়ি, কাঁচের চুড়ি, কত কৌশলে হাতে পরিয়ে দিয়ে চলে যেত সে পয়সা নিয়ে। চুড়ি বেচবার কৌশলও জানত। চুড়ি পরাবার কৌশলও জানত। কোন্ রঙের পর কোন্ চুড়ি মানাবে বড় চিত্রকরীর মত বুঝত তার হিসেব সেই চুড়িওয়ালী। বোষ্টমী আসত ঠিক সেই সময়ে ভক্তিতত্ত্বের গান শোনাতে। তোমরা বঙ্কিমবাবুর নভেলে যে সব ছবি পাও সে সব ছবি স্বচক্ষে দেখেছি আমি খুব ছেলেবেলায়। এখনো চুড়ি পরানো ছবি আঁকতে সেই শিশুমনের সংগ্রহ কাজ দেয়। হাতের চুড়িগুলি আঁকতে কোন্ রঙের পর কোন্ রঙের টান দিতে হবে জানি, সেজন্য আর ভাবতে হয় না। তুমি যে সেদিন বললে, সাঁওতালনীদের খোঁপা আপনি কেমন করে ঠিকটি এঁকে দিলেন? খোঁপার কত রকম প্যাঁচ সেই চুল বাঁধার ঘরে বসে শিশুদৃষ্টি শিশুমন ধরেছিল।
মা বসে আছেন কাঠের তক্তপোশে, দাসীরা চুল বেঁধে দিচ্ছে ছোট ছোট বউ-মেয়েদের। সে কত রকমের চুল বাঁধার কায়দা খোঁপার ছাঁদ। বোষ্টমী বসে গাইত, ‘কানড়া ছান্দে কবরী বান্ধে।’ সেই কানড়া ছান্দের খোঁপা বাঁধত বসে পাড়াগাঁয়ের দাসীরা। তোমরা খোঁপা তো বাঁধো, জানো সে খোঁপা কেমন? মোচা খোঁপা, কলা খোঁপ, বিবিয়ানা খোঁপা, পৈচে ফাঁস, মনধরা খোঁপার ফাঁস, কত তার বর্ণনা দেব। কত বা এঁকে দেখাব। এইবার আসত ফুলওয়ালী কলাপাতার মোড়কে ফুলমালা হাতে। সেই ফুলমালা নিজের হাতে জড়িয়ে দিতেন মা খোঁপায় খোঁপায়। সন্ধ্যেতারা উঠে যেত, চাঁদ উঠে যেত। সন্ধ্যে হ’লই গোঁপে তা দিয়ে দক্ষিণের বারান্দায় বসে আলসেমি