করি—মতিবাবু আসেন, শ্যামসুন্দর আসেন। আমি বসি কোনোদিন ম্যাণ্ডোলিন নিয়ে, কোনোদিন বা এসরাজ নিয়ে। মতিবাবু শিবের বিয়ের পাঁচালি গান—
তোরা কেউ যাসনে ওলো ধরতে কুলো কুলবালা, মহেশের ভূতের হাটে এসব ঠাটে সন্ধ্যেবেলা।
যেরূপ ধরেছিস তোরা, চিত-উন্মত্ত-করা,
চাঁদ যেন ধরায় ধরা, খোঁপায় ঘেরা বকুলমালা।
এই রকম বকুলমালা জুইমালায় সাজানো সে-বয়েসের দিনরাতগুলো আনন্দে কাটে। মা রয়েছেন মাথার উপরে, নির্ভাবনায় আছি।
ভুবনবাই বলে একটা বুড়ি আসত। মা তাকে বউদের গান শোনাতে বলতেন। সখীসংবাদ, মাথুর, গাইত সে এককালে আমার ছোটদাদামশায়ের আমলে—
তোরা যাসনে যাসনে যাসনে, দূতী
গেলে কথা কবে না সে নব ভূপতি।
যদি যাবি মধুপুরে
আমার কথা কোসনে তারে।
বৃন্দে, তোর ধরি করে, রাখ এ মিনতি।
ফোকলা দাঁতে তোতলা তোতলা সুরে সে এই গান গেয়ে মরেছে। কিন্তু সেই বুড়ি যেটুকখানি ধরে গেছে আমার মনে, সেই বস্তুটুকুও যে আমার কৃষ্ণলীলার কোনো ছবিতে নেই তা মনে কোরো না।
নান্নীবাই শুনেছি এককালে লক্ষ্ণৌএর খুব নামকরা বাইজি ছিল, রুপোর খাটে শুত, এত ঐশ্বর্য। সর্বস্ব খুইয়ে সে আসে ভিখিরির মতো, পাঁচিলঘেরা গোল চক্করের কাছে বসে গান গায়, এবাড়ি ওবাড়ি থেকে কিছু টাকাপয়সা যা পায় নিয়ে চলে যায়। বুড়োবয়েসেও চমৎকার গলা ছিল তার, এখনকার অনেক ওস্তাদ হার মেনে যায়।
শ্রীজানও আসে। সেও বুড়ো হয়ে গেছে। চমৎকার গাইতে পারে। মাকে বললুম, ‘মা, একদিন ওর গান শুনব।’ মা বললেন শ্রীজানকে। সে বললে, ‘আর কি এখন তেমন গাইতে পারি। বাবুদের শোনাতুম গান, তখন গাইতে পারতুম। এখন ছেলেদের আসরে কি গাইব?’ মা বললেন, ‘তা হোক, একদিন গাও এসে, ওরা শুনতে চাইছে।’ শ্রীজান রাজি হল, একদিন সারারাতব্যাপী শ্রীজানের গানের জলসায় বন্ধুবান্ধবদের ডাক দেওয়া গেল। নাটোরও ছিলেন