পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৭৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬৬
জোড়াসাঁকোর ধারে

 ‘না, পুতুল দিয়ে কি করব? আমায় নুড়িগুলো বরং দাও।’

 ‘কি করবি তুই?’

 ‘ভাইকে দেব, ঘুঁটি খেলাবে।’

 কোনোদিন চায় পুরোনো খবরের কাগজ, বাপকে দেবে, বাপ ঠোঙা করে বাজারে বেচবে। কোনোদিন বা চায় পুরোনো টিনের কৌটা, মাকে দেবে, মা মসলাপাতি রাখবে।

 এমনি রোজই আসে। হঠাৎ আসে নিঃশব্দে, বুঝতে পারিনে কোথা দিয়ে আসে। বিনিপয়সার খেলুড়ি ফেলা নিঃসঙ্গ দিনের, মানুষের মধ্যেও সে ফেলা, কাঠকুটরো, ছেঁড়া টুকরো কাগজেরই সামিল। যত ফেলা জিনিস কুড়িয়ে বাড়িয়ে এক বুড়ো আর এক মেয়ে খেলা জুড়েছি সেই দক্ষিণের বারান্দায়। একদিন ফেলা বললে, ‘তোমাদের বাড়ির ভিতরটা দেখাবে আমায়?’

 ‘দেখবি?’

 রাধুকে ডেকে বললুল, ‘নিয়ে যা একে বউমার কাছে, বাড়ির ভিতর দেখতে চায়।’

 বউমা আবার তাকে একপেট খাইয়ে দিলে। সে পাকা গিন্নির মত সব ঘুরে ঘুরে দেখে ফিরে এল।

 বললুম, ‘দেখা হল, ফেলাবতী, বাড়ির ভিতর?

 বললে, ‘হ্যা।’

 ‘তবে এবার তুই বাড়ি যা, আমিও উঠি, নাইতে খেতে হবে।’

 দক্ষিণের বারান্দায় সেই শেষ প্রবেশ ফেলাবতী ও আমার। তার পর অসুখে পড়লুম। সেই অবস্থাতেই শুনি দক্ষিণের বারান্দা বিকিয়ে গেছে মাড়োয়ারিদের হাতে। রোগী আমি, একটা মাস মেয়াদ পেয়েছি আর এবাড়িতে থাকবার।


মধুর তোমার শেষ যে না পাই,
প্রহর হল শেষ।

 এ ‘মধুর শেষ নেই। প্রহর শেষ হয়ে যায়। কত মধুর, আমাদের এমন পাত্র তাতে এর এক ফোঁটা মধুও ধরতে পারিনে। ধুলোতেও মধু, তাই তো বলি, গোরুর গাড়ি রাস্তার বুক চিরে চলেছে আঁকলেম, কিন্তু ধুলো উড়ল