পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
জোড়াসাঁকোর ধারে

ইচ্ছে করে না। অথচ দেখতুম তো চোখের সামনে রবিকাকে; তিনিও তে। আর-এক আর্টিস্ট, পৃথিবীর এ-মাথা ও-মাথা ঘুরে বেড়িয়েছেন। বলতেন, ‘অবন, তুমি কী? একটু ঘুরে বেড়িয়ে দেখো চারদিক, কত দেখবার আছে।’ ছেলেবেলায় কল্পনা করতুম বড় হয়ে কত দেশবিদেশ বেড়াব, ইচ্ছেমত এখানে ওখানে যাব। কিন্তু বড় হয়ে যখন বেরোবার বেড়াবার সেই সময়টি এল হাতে তখন বাড়িতেই বসে রইলেম একেবারে ঘোরো বাবুটি বনে, তোমার জন্য ঘরোয়া কথার মালমশলা সংগ্রহ করতে। তবে ঘরে বসেই সারা পৃথিবীর মানুষের আর্ট আমি চর্চা করেছি, এ কথা বিশ্বাস করো।

 আর্টস্কুলের চৌকিতে বসে থাকতুম; কত দেশবিদেশ থেকে নানারকম ব্যাপারী আসত নানারকম জিনিস নিয়ে। গবর্মেণ্টের টাকায় আর্ট গ্যালারির জন্য জিনিস সংগ্রহ করছি, সঙ্গে সঙ্গে দেশের আর্টের সঙ্গে পরিচয়ও ঘটে যাচ্ছে। এই করে আমি চিনেছিলেম দেশের আর্ট। তার উপরে ছিলেন আমার হ্যাভেল গুরু। এ দেশের আর্ট বুঝতে এমন দুটি ছিল না, রোজ দুঘণ্টা নিরিবিলি তাঁর পাশে বসিয়ে দেশের ছবি, মূর্তির সৌন্দর্য, মূল্য, তার ইতিহাস বুঝিয়ে দিতেন। হুকুম ছিল আপিসের চাপরাসিদের উপর ওই দু-ঘণ্টা কেউ যেন না এসে বিরক্ত করে।

সদ্‌গুরু পাওয়ে, ভেদ বাতাওয়ে,
জ্ঞান করে উপদেশ,
তব্‌, কয়লা কি ময়লা ছোটে
যব্‌ আগ্‌ করে পরবেশ।

ভাবি সেই বিদেশী গুরু আমার হ্যাভেল সাহেব অমন করে আমায় যদি না বোঝাতেন ভারতশিল্পের গুণাগুণ, তবে কয়লা ছিলেম কয়লাই হয়তো থেকে যেতেম, মনের ময়লা ঘুচত না, চোখ ফুটত না দেশের শিল্পসৌন্দর্যের দিকে।

 ভারতের উত্তর দক্ষিণ পূব পশ্চিম সবদিকে ছিল চর আমাদের। এক তিব্বতী লামা ছিল, মাঝে মাঝে আসত; দামি দামি পাথর, চাইনিজ জেড, তিব্বতী ছবি, নানারকম ধাতুর মূর্তি আনত। সে এলেই আমরা উৎসুক হয়ে থাকতুম দেখতে এবারে কি এনেছে। একবার এল সে বললে, শরীর খারাপ, দেশে যাব কিছুকালের জন্য। বোম্বে যাচ্ছি, কিছু টাকা পড়ে আছে, তুলতে পারি কিনা দেখি। এবারে তাই বেশি কিছু আনতে পারিনি। তবে কিছু কানুরের পুঁথি এনেছি এই দেখুন।’ খুব পুরানো পুঁথি, দুষ্প্রাপ্য জিনিস,