পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জোড়াসাঁকোর ধারে
৮১

কিন্তু আমার তো কোনো কাজে লাগবে না। এ পুঁথি আমি নিয়ে কি করব। ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরিতে হরিনাথ দে মস্ত ভাষাবিদ, সব ভাষাই তিনি জানতেন শুধু চীনে ছাড়া; বলতেন, ‘এবারে চীনেভাষাটা আমার শিখতে হবে।’ তার কাছে যেতে বললুম এই পুঁথি নিয়ে। বেশ দাম দিয়েই রাখবেন, দরকারি জিনিস। বললুম, ‘আর কি এনেছ দেখাও।’ সে একটি ছোট্ট পলার গণেশ বের করলে। বেশ গণেশটি; পছন্দ হল। পাঁচ-সাত টাকা চাইলে বোধ হয়, তা দিয়ে গণেশটি আমি পকেটে পুরলুম। বললুম, ‘আর?’ সে এবারে একটি কৌটো বের করলে, বললে, ‘আর কিছু নেই সঙ্গে এবারে।’ সেটি একটি নাসদান, খোদাই করা স্টীলের উপরে সোনার কাজ, একটা ড্রাগন আঁকা, বড় সুন্দর। রাখবার ইচ্ছে আমার। জিজ্ঞেস করলেম, ‘দাম?’ সে বললে, ‘পঞ্চাশ টাকা।’ আমি বললুম, ‘এ বড় বেশি চাইলে।’ সে বললে,‘ তা এখন ওটা আপনার কাছেই থাক্। কেউ নেয় তো বেচে দেবেন। আমি ফিরতি পথে এসে টাকা নিয়ে যাব।’ ব’লে তাড়াতাড়ি জিনিসপত্তর গুটিয়ে চলে গেল। সে চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই আমার কি রকম যেন মনে হল, জিনিসটা রাখলুম, দাম দিলুম না, বললে ওর শরীর খারাপ—যদি ও ফিরে না আসে আর? কাজটা কি ভালো হল? যাক, কি আর করা যাবে? বাড়ি এসে অলকের মাকে পলার গণেশটি দিলুম, বললুম, ‘এটি দিয়ে আমার জন্য একটি আংটি করিয়ে দিয়ো।’ সে আংটি আমার আঙুলে অনেকদিন ছিল, পরে হারিয়ে গেল। আর নাসদানিটি তাঁর হাতে দিয়ে বললুম, ‘এটি গচ্ছিত ধনের মত সাবধানে রেখো। ওকে টাকা দেওয়া হয়নি এখনো।’

 তার পর এক বছর যায়, দু-বছর যায়, আর সে আসে না। হঠাৎ একদিন সেই লামার একটি ভাই এসে উপস্থিত। বললে, ‘সে সেবারে বোম্বে গিয়ে দু-চারদিন পরেই মারা গেছে। আপনাদের কাছে তার যা পাওনা আছে সেই সব টাকা আমায় দিন।’ আমি জানতুম, এই ভাইয়ের সঙ্গে লামার বনিবনাও ছিল না। বাড়িঘরের সুখদুঃখের কথা প্রায়ই বলত সে। এখন সেই ভাই তার মৃত্যুর পরে কাগজপত্র হাত করে টাকাও আত্মসাৎ করবার চেষ্টায় আছে। আমি তো তখনি তাকে হাঁকিয়ে দিলুম। বললুম, ‘কে তুমি। তোমায় জানিনে, শুনিনে, টাকা দিতে যাব কেন? যদি তোমার ভাইয়ের ছেলেপুলে থাকে বা তার স্ত্রী আসে তবে দেখতে পারি।’ সে তাড়া খেয়ে ভাগল।

 তার কিছুদিন পরে সেই লামার বুড়ি স্ত্রী এল, পাহাড়ি মেয়ে। আগেও

১১