পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জোড়াসাঁকোর ধারে
৮৩

বেচারার হয়তো স্বামীর কথা মনে পড়েছিল, কি স্মৃতি ছিল তাতে সেই জানে। খানিক দেখে কৌটোটি আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললে, “তিনি তোমায় দিয়ে গেছেন, এটি তোমার কাছেই থাকুক। দাম আমি কিছুই চাইনে।’ বললুম, ‘সে কি কথা। তোমার স্বামী মারা গেছে, তোমার টাকার দরকার, আর তুমি দাম নেবে না, বল কি? সে হবে না।’ বুড়ি ছলছল চোখে বললে, ‘বাবু, ও কথা বোলো না। আমি জানি আমার স্বামী অনেককেই নানা জিনিস বিক্রি করত, অনেকের কাছে টাকা পড়ে থাকত। আমি কলকাতায় এসে কদিন যাদের যাদের ঠিকানা পেয়েছি তাদের কাছে ঘুরেছি, দাম দেওয়া দূরে থাকুক, কেউ স্বীকার পর্যন্ত করলে না যে তারা আমার স্বামীকে চিনত। এক তুমি বললে যে, আমার স্বামীর জিনিস তোমার কাছে আছে। তোমার কাছ থেকে আমি এক পয়সাও চাইনে, এই কৌটো তোমার কাছেই থাকুক। আর এই চাদরটি তোমার স্ত্রীকে দিয়ো আমার নাম করে।’ বলে থলে থেকে একটা মোটা সুজনির মত চাদর, পাহাড়ি মেয়েরা গায়ে দেয়, তা বের করে হাতে দিলে। জীবনের কর্মের আরম্ভে বড় পুরস্কার পেলুম আমরা দুজনে এক গরিব পাহাড়ি বুড়ির কাছে—একটি গায়ের চাদর, একটি সোনার নাসদান।

 আর একবার হঠাৎ একটা লোক এসে উপস্থিত আমার কাছে—জাপানী টাইপ, কালো চেহারা, চুল উস্কোখুস্কো, ময়লা কোট পাজামা পরা, অদ্ভুত ধরনের। আর্টস্কুলের আপিসে বসে আছি, চাপরাসি এসে বললে, ‘হুজুর, এক জাপানী কুছ লে আয়া।’ বললুম, ‘আনো তাকে এখানে।’ সে এল ভিতরে, বললুম, ‘আমার কাছে এসেছ? তা কি দরকার তোমার?’ সে এদিক ওদিক তাকিয়ে কোটের বুকপকেট থেকে কালো রঙের চামড়ার একটা ব্যাগ বের করলে, করে তা থেকে দুটি বড় বড় মুক্তো হাতে নিয়ে আমার সামনে ধরলে। দেখি ঠিক যেন দুটি ছোট আমলকী। এত বড় মুক্তো দেখিনি কখনো। এ কোথায় পেল? সে মুক্তো দুটিকে শঙ্খমণি না কি মণি বলে, আর আমার চোখের সামনে নাড়ে। বললুম, ‘বিক্রি করবে?’ দাম চাইলে দুটোতে একশো টাকা। মুক্তো কিনব, তা নিজে তে চিনিনে আসল নকল। বাড়িতে ফোন করে দিলাম জহুরী কিষণচাঁদকে বড়বাজার থেকে খবর দিয়ে যেন আনিয়ে রাখে, আমি আসছি এখনি। ভুল হয়ে গেল গাড়িটার কথা বলতে। বাড়ির গাড়ি আসবে স্কুল ছুটি হলে। . আমার আর ততক্ষণ সবুর সইছে না। একটা ঠিকে গাড়ি করেই রওনা হলুম সেই লোকটিকে নিয়ে। বাড়ি পৌঁছে দেখি