পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
জোড়াসাঁকোর ধারে

১২

 হ্যাভেল সাহেবদের একটা সোসাইটি ছিল জনকয়েক সাহেব মেম আর্টিস্ট নিয়ে। সন্ধ্যেবেলা আর্ট স্কুলেই তারা ঘণ্টা দুয়েক কাজ করত; আলোচনা সমালোচনা হত, মাঝে মাঝে খাওয়া-দাওয়াও চলত, অনেকটা আর্ট ক্লাব গোছের। মার্টিন কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার থর্নটন সাহেবই দেখাশোনা করতেন। তাঁর উপরেই ছিল ওই আর্ট ক্লাবের সব কিছুর ভার। চমৎকার আঁকতেও পারতেন তিনি। অমায়িক সৎ লোক ছিলেন, মহৎ প্রাণ ছিল তার। অমন সাহেব দেখা যায় না বড়। আমার সঙ্গে খুব জমত। সেই থেকেই আমার সঙ্গে তার আলাপ। পরে আমাদের সোসাইটির সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। আমি যখন আর্ট স্কুলে তিনি আসতেন আমার কাছে প্রায়ই; আবার ডেকেও পাঠাতেন কখনও কখনও। চারটের পরে যেতুম তার আপিসে। খুব বিশ্বাস ছিল আমার প্রতি, টেবিলের দেরাজ থেকে তাঁর আঁকা নানারকম স্থাপত্যকর্মের প্ল্যান বের করে আমায় দেখাতেন, পরামর্শ চাইতেন। কোন্‌টা কি রকম হলে আরো ভালো হয় দু বন্ধুতে মিলে বলা কওয়া করতুম। সেই সময়ে দেখেছি তার ড্রইং। ভারি সুন্দর। ভারতবর্ষের নানা জায়গা ঘুরেছেন; উদয়পুর জয়পুরের কতকগুলি স্কেচ্‌ করেছেন, লোভ হত দু-একখানির উপর। অনেক সাহেব এদেশের স্কেচ্‌ করেছে, ছাপিয়েছেও দু-একজন; কিন্তু তাদের স্কেচ্‌গুলিতে কেমন যেন বিদেশের ছাপ থাকত আর থর্নটনের অ্যালবাম যেন ভারতবর্ষের হুবহু ছবি। মাঝে মাঝে তার ফ্ল্যাটেও যেতুম; তেতলার ফ্ল্যাট, গোল সিঁড়ি দিয়ে ঘুরে ঘুরে উপরে উঠে চাপরাসিকে জিজ্ঞেস করতুম, ‘সাহেব আছেন?’ চাপরাসি উত্তর দিতে না দিতেই ওদিক থেকে ঢিলে ঢালা পাজামা পরে সাহেব এসে উপস্থিত হতেন; তারপর দুজনে বসে কত গল্প, কত হাসি, কত মজাই না করতুম। প্রাণ-খোলা হাসি ছিল তার। তাদের আর্ট ক্লাব ভেঙে গেলে পর, ক্লাবের বোর্ড আলমারি আমাকে তিনি দিয়েছিলেন। বললেন, ‘কী হবে আর এসব দিয়ে, তুমিই নিয়ে যাও, কাজে লাগবে।’

 আমাদের আর্ট সোসাইটির উনি একজন বড় উৎসাহী সভ্য ছিলেন। শুধু তাই নয়, বড় খদ্দেরও ছিলেন। নন্দলালের অনেক ছবি উনি কিনেছেন। একবার নন্দলালের ‘সতী’ ছবিখানি কিনেছেন। সে সময়ে আমরা ঠিক করি, ভালো ভালো ছবিগুলি ছাপিয়ে বাজারে ছড়িয়ে দেব। করিয়েও ছিলুম কিছু, খুব ভালো হয়েছিল। তা সেই ‘সতী’ ছবিখানি ও আর খানকয়েক ছবি,