পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঝাঁশির রাণী।
৬৯

ছাউনীর দুই মাইল দুরে বাহাদুরপুরে আসিয়া উপস্থিত এবং সেখান হইতে বিদ্রোহীদিগের ছাউনীর অভিমুখে গোলাবর্ষণ করিতে লাগিলেন। দুই একটা গোলা ছাউনীর পার্শ্বে আসিয়া পড়ায়, পেশোয়ার সেনা- নায়কগণ শিঙ্গা বাজাইয়া সমস্ত সৈন্যকে যুদ্ধার্থে প্রস্তুত হইতে ইসারা করিল। কিন্তু পেশোয়ার নিকট যে দুই একজন মুস্ফুদ্দি-লোক ছিল তাহারা বলিল পেশোয়া সরকারের সহিত প্রেম-সম্বন্ধ সিন্ধিয়া-সরকারের মধ্যে এখনও জাগ্রত আছে—সিন্ধিয়া-সরকার কখনই আপনার সহিত যুদ্ধ করিবেন না। ঐ যে তোপের আওয়াজ শোনা যাইতেছে, বোধ হয় উহা আপনার স্বাগতা সিন্ধিয়া সেলামী দিতেছেন।” রাও-সাহেব পেশোয়া ও তাত্যাটোপের, সিন্ধিয়ার সাহায্যের উপর পূর্ণ ভরসা থাকায়, তাহারা এই কথায় বিশ্বাস করিয়া যুদ্ধের হুকুম দিলেন না। এদিকে, শত্রুপক্ষ হইতে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ হইতে লাগিল, পেশোয়ার সৈন্য অতিষ্ঠ হইয়া পলাইতে আরম্ভ করিল; পেশোয়া একেবারে বিহ্বল হইয়া পড়িলেন।

 রাণীঠাকুরাণী এইরূপ অবস্থা অবলোকন করিয়া, মহা-আবেশ-সহকারে আপনার দুই তিন শত ঘোড়শোয়ার সঙ্গে লইয়া, একেবারে সম্মুখে অগ্রসর হইলেন এবং সিন্ধিয়ার তোপখানার উপর সবেগে ধাবমান হইলেন। তোপখানা আক্রমণ করিবামাত্র, গোলন্দাজের তোপ ফেলিয়া পলায়ন কেবল, মহারাজ জরাজীরাও-সিন্ধিয়া শৌর্যানলে প্রজ্বলিত হইয়া, আপনার খাস-সৈন্য সঙ্গে লইয়া প্রাণপণে যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। কিন্তু রাণীর সহিত যুদ্ধে পরাভূত হইয়া, দিনকর-রাও ও দুই এক জন সর্দার সমভিব্যাহারে মহারাজ সিন্ধিয়া আগ্রা অভিমুখে পলায়ন করিলেন।

 এদিকে, শ্রীমন্ত রাও-সাহেব পেশোয়া, মঙ্গলবাদ্য-সহকারে মহা সমারোহে গোয়ালিয়ার-প্রাসাদে আ গমন করিলেন। মহারাণী লক্ষ্মী- বাই ঠাকুরাণী, সৈন্য-ছাউনীর নিকট ‘নবলখ’ নামক এক বাগানবাড়ীতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাত্যা-টোপে গোয়ালিয়ার-কেল্লায় কতক- করিল।