পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার। গিয়ে ঘাড়ের উপর চেপে যসেন ! এই হচ্ছে মামুলি বিশ্বাস। আর তুমি যদি এর বিপরীত কিছু বল তাহলে সেটা তােরই অজ্ঞতা বলে প্রতিপন্ন হবে। এখানে আয় একটা গল্প না বলে এগিয়ে চলাটা ঠিক হবে না। একবার সুন্দর বনে বাঘে একজন নাপিতকে দিনে দুপুরে আক্রমণ কয়েছিল। ধূর্ত নাপিত ভয় পাবার পাত্র নয় ! সে কল্লে কি জান ?—তার পুটুলি হতে নরুণটি না বার কয়ে বাঘের গলায় বসিয়ে দিলে! আর যাবে কোথা ? বাঘ আর পালাবার পথ পায় না। কিন্তু পালাবার যে কি ? চতুর নরসুন্দর ততক্ষণ তার লেজ ধরে আটক করেছে। ফলে কি দাড়ায় জান? থলের মুখ ফঁাক পেলে ইদুর যেমন পালায়, বাঘটি তেমি করে দে চম্পট! কিন্তু আলাঙ্গুল ডােরাকাটা বাঘছাল খানি বিজয়ী নাপিতভায়ার হাতেই রয়েই গেল! দুঃখের বিষয় এমন অপূর্ব ঘটনা অতঃপর আর ঘটবার সম্ভাবনা নেই। তেমি নাপিত সবেমাত্র একটি ভূভারতে জন্মে ছিল ? মরণকালে এমন অসম্ভব বীরত্ব সঙ্গে করেই নিয়ে চলে গেছে। যে ভদ্রলােক এ গল্পটি আমায় বলেছিলেন তিনি পরে জার্মানদেশে অন্ত্র চিকিৎসা করাতে মারা গিয়েছেন, কিন্তু গল্পটী অমর হয়েই আছে। | চিতার শিকারপদ্ধতি কিন্তু ভিন্ন। সে বাড়ে গিয়ে পড়ে বা গায় কামড় দিয়ে ধরে থাকে। জন্তুটা মরে পড়ে গেলে তবে তাকে ছাড়ে ! লােকে বলে রক্ত শুষে খাবার জন্যে সে এমি করে ; কিন্তু এটাকে সাক্ষ্যস্বরপে মেনে নেওয়া চলে না, কেননা এ সম্বন্ধে প্রমাণ কিছু পাওয়া যায় নি। | আমি যতদূর জানি, তাতে বলতে পারি চিতা আহাৰ্য্য সম্বন্ধে অনেকটা সাত্বিক। বাঘের মত অমন তামসিক নয়। নে উচ্ছিষ্ট কিম্বা পদ্যুষিত আহার করে না। আর তা ছাড়া চিতা পরের শিকার করা ও আহার করে না। বাঘের অত বাচ-বিচার নেই—যা পায় তাই খায়;-তবে ক্ষুধার তাড়নায়, সুবােধ স্বভাবের জন্যে নয় ! আমি দেখেছি একটি ছোট অথচ পূর্ণবয়স্ক বাঘ একবার বাঘিনীর শিকার করা একটা মােষ অধিকার করে বসেছিল। তারপর যার সম্পত্তি সে আমাত্র “অৰ্দ্ধং ত্যজতি পণ্ডিতঃ”, এই নীতি বাক্য শিরােধার্য করে অবিলম্বে পলায়ন করলে। এ ব্যাপার যেখানে ঘটেছিল শুনেছি সেইখানেই এক বা ঘনী পরের শিকার চুরি করে খেয়ে বেড়াত। কিন্তু যখন বন্দুকের গুলিতে মারা পড়ল তখন দেখা গেল তার শরীরখানি একেবারে অস্থিচর্মসার। কারণ অনুসন্ধান করে আবিষ্কার হল যে তার টাকরায় অনেকগুলি সজারুর কাটা আটকে রয়েছে, আর কতকগুলো বিঁধে তার চোয়াল ফুটো হয়ে গিয়েছে। মুখের চারিদিকে মৌচাকের মত ঘায়ের সমষ্টি। এ অবস্থায় চুরি করে খাওয়াত দূরের কথা, মুখের গােড়ায় খাবার এগিয়ে এলেও খাওয়া তার পক্ষে অসাধ্য হয়ে দাড়িয়ে ছিল। তাই বহুদিনের উপাসে দেহখানি হাড়ের মালায় পরিণত। একজন মন্ত শিকারী আমায় বলেছেন, তিনি একবার একটা বাঘ মারার পর দেখেছিলেন তার সম্মুখের হাতে মস্ত একটা সজারুর কাটা বিঁধে আটকে ছিল। বাঘ আর চিতা দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে কত বড় হতে পারে, সে কথা অনেক শিকারের বইয়ে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু নানা শিকারীর নানামত। তাই মাপ করবার নিয়ম সবার সমান নয় বলে, এ সম্বন্ধে মতৰেধ দেখা যায়। বাঘ বন্দুকের গুলি খেয়ে মরবার অব্যবহিত পরেই, তার লম্বই চওড়াই কতখানি সেটা মাপা উচিত। কেননা দেরি হলে দেখা যায় তার শরীর সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছে। আমি একবার