পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার ১১ই জানুয়ারী ১৯১৮ মেহের অলক কল্যাণ, অনেকগুলি সম্বরের মাথা আমাদের বাড়ীর দেওয়ালের শােভা বৃদ্ধি করছে। এই হরিণের সঙ্গে যদিও তােমরা বিশেষভাবে পরিচিত তবু গৃহপ্রাচীরের বাহিরে দূরে তাদের জন্মভূমি আরণ্য প্রান্তরে নিয়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে তােমাদের দেখা শােনা করিয়ে দিতে চাই। উন্নত সুগঠিত সুন্দর অবয়ব, ডাগর দুটী চোখ—সবল সুঠাম গতি ভঙ্গী-শাখাবিবিষ্ট বিস্তৃত শৃঙ্গাবলী ! এই সকল সৌন্দর্য্যেয় সমাবেশে আরণ্য জীবের মধ্যে সে সুন্দর ও মহতের পদবী লাভ করেছে। সারা রাত বন ভ্রমণের পরে প্রাতঃকালে কোন পৰ্ব্বতে বিশ্রামের জন্যে সে যখন ফিরে আসে তখন তাকে দেখতে বড় চমৎকার মনে হয়। চকিত ভীত ভাব সকল জন্তুকেই বিশেষ একটী শ্রী দান করে, কিন্তু এ অবস্থায় । আর কেউ হরিণের মত মনােহর হতে পারে না। তাদের বসতি, স্থানবিশেষে সীমাবদ্ধ নয়। শৃঙ্গশােভিত দুই একটা মস্তক লাভের জন্য পরিশ্রম করা সার্থক। এ সমস্ত সুন্দর জীব অধিক হত্যা করার পক্ষপাতী আমি নহি। যথার্থ মৃগয়ানুরক্ত ব্যক্তি কখন জহাদ হতেই পারে না। এ জন্তুকে জলাশয়ের নিকটবর্তী স্থানের মধ্যে শিকার করায় কোন বাহাদুরি নাই। শীতকালে এরা ডলে কাদায় পড়ে গড়াগড়ি দিতে বড় ভালবাসে। সম্বর-অধ্যুষিত শৈল প্রদেশে গ্রামের বহির্ভাগে জলাশয় গুলিতে তাদের এই অভ্যাসের চিহ্ন সদা সর্বদা দেখতে পাওয়া যায়। একবার এমনি একটী জলাশয়ের পাশে বাঘের জন্য আমি আড় পেতে বসে আছি এমন সময় মনে হল মস্ত একটা জানোয়ার সাবধানে সেই দিকে আসছে। পদ*ব্দে বুঝলাম সে বাঘ নয়। তার জলে ঝাঁপিয়ে পড়বার শব্দ কানে এল। দেখলাম প্রকাণ্ড একটা সম্বর সেখানে পড়ে পঙ্কোৎসব করছে। এ পাশ হতে ও পাশে গড়াগড়ি দিচ্ছে, তার পর উঠে আবার এমনি হিতাহিতজ্ঞানশূণ্য হয়ে লাফ দিয়ে পড়ছে যে আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম যে নালার পাথরে লেগে তার শিং জোড়াটা মর মর শব্দ করে উঠছে। গারাে পাহাড়ের নীচেকার ঘাস বনে গ্রীষ্মকালে যেন এদের মেলা বসে যায়। নাগপুর অঞ্চলে এদের জ্ঞাতি ভাইদের মস্তকের আয়তন আরাে বৃহৎ। কেন যে এ প্রভেদ ঘটে আমি বলিতে অক্ষম। গাঢ় পাটকিলে রংএর হরিণ গুলি আয়তনে বৃহত্তর, কিন্তু তাদের শৃঙ্গযুগল তুলনায় লঘু। পাটল বর্ণের হরিণের আয়তন ক্ষুদ্র, অথচ তাদের শৃঙ্গ বৃহত্তর। এ বিভিন্নতার প্রকৃষ্ট কারণ যে কি আমি এখনও তা ভেবে ঠিক করতে পারি নি। আমি শুনেছি আরাে এক বিশেষ জাতীয় সম্বর আছে। তার নাম গোসম্বর। এদের বসতি সম্বলপুর প্রদেশে। শীতকালে এদের দর্শন লাভ ঘটে। হাতের পাঁচটা আঙ্গুলের মত বিভিন্ন শৃঙ্গই এই হরিণের বিশেষত্ব। এই প্রদেশের বনবিভাগের কর্মচারীর কাছে শুনেছি এই গৌসম্বর তিনি দেখেছেন। এই বিশেষ জীবটী প্রকৃতির কোন খামখেয়ালি, না কোন শিকারী সত্যই এই জাতিকে দেখেছেন, এ কথা আমি অনেকবার মনের মধ্যে ভােলা পাড়া করেছি। আমার তো আজ পর্যন্ত এই বিশেষ জীবের নমুনা সংগ্রহ করবার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তবে এ সংবাদ যে অলীক নয় তার প্রমাণ এই যে সম্বলপুর প্রদেশে অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন সময় ও স্থানে আমার কাছে গৌসম্বরের এই অপূৰ্ব্ব বিশেত্ব বর্ণনা করেছেন। গোসরের জীবনীশক্তি অসাধারণ, সহশক্তিও আশ্চৰ্য্য। আহত হয়েও তারা অনেক দূর পৰ্য্যন্ত যেতে পারে। এক বাইসন ভিন্ন অন্য কোন জন্তুরই এ ক্ষমতা নেই। ঘাড় আর কঁাধের সস্থিলে