পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার। | ৬৩ গুলি খেয়ে একটা হরিণ দশ গজের উপর এমনই দৌড়ে গিয়েছিল যে আমার বন্ধু জ-- মনে করে ছিলেন গুলি বুঝি মােটেই লাগে নি। তিনি প্রায় ত্রিশ গজ দুর হতে গুলি মরেছিলেন। তাঁর বন্দুক ছিল 12 Bore Paradox। প্রথম গুলির শব্দে আমার মনে হল যেন পাথরের উপর গিয়ে পড়ল। দ্বিতীয় গুলিটা ঠিক লেগেছিল। আমি যা অনুমান করেছিলাম তা ঠিক। প্রথমটী তার শৃঙ্গযুগলে আঘাত করে, দ্বিতীয় গুলি কঁাধে লাগে ! বাঘ কি চিতা যখন তাদের তাড়া করে যায় তখন বনের ঘন তরু শ্রেণীর মধ্য দিয়ে পলায়ন চেষ্টা অনেক সময় ব্যর্থ হয়। শিঙ্গ, দুটা বাঁচিয়ে মাথা ফিরিয়ে যাবার কৌশল ও কোন কাজে লাগে ন। গত বৎসর আশ্বিন মানে যারা বন পিটোয় তাদের মশ্যে ভয়ে তাড়'তা িপালাবার চেষ্টায় একটি হরিণ এই অবস্থায় বিশেষ বিপদগ্রস্ত হয়েছিল। বেচারা ভয়ে কাণ্ড জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। সােজা লাফ দিয়ে যাবার সময় গুড়ের গায়ে যেখানে দুটি ডাল দুবারে গিয়েছে সেই খানে তার শরীরটা আটকে গেল। ডালে আর গাছের গায়ে জড়ান ঘন লতা তার দুটী শিং এমনি জড়িয়ে গেল কিছুতেই আর ছাড়াতে পারলে না। তার এই অসহায় অবস্থার দৃশ্য বড় শােচনীয় হয়েছিল। উদ্ধার করবারও কোন উপায় ছিল না। আমরা কাছে এসে পৌঁছিবার আগেই এক জন নির্দয়ভাবে কুঠারের আঘাতে তার পা ভেঙ্গে দিয়েছিল। বলা বাহুল্য অবিলম্বে তার সব যন্ত্রণার অবসান করে দেওয়া হ। | আমার বিচারে সোন্দৰ্য্য সভায়, অনুপ ভূমির কড়া শিঙ্গা হরিণ (Swamp lueer )'কে দ্বিতীয়। আসন দেওয়া যেতে পারে। সে আয়তনে সম্বরের চেয়ে ছােট, কিন্তু তার কাল ভােরা কাটা, ছােট ছােট সাদা গুলশন, হাল্কা পাটকিলে রঙ্গের জামাটা বড় সুন্দর,-আলােয় জ্বল জ্বল করে। সে নাচু জমি আর জল বড় ভালবাসে। একা বাস করে না, সৰ্ব্বদাই দল বেঁধে থাকে। শিং দুটিতে অনেক সময় চৌদ্দটী পর্যন্ত ডাল দেখতে পাওয়া যায়। এমন এক জোড়া শিং অজ্জন-যােগ্য, বিশেষ আদরণীয়। পিরানের বাহারের জন্যে যে হরিণের নাম চিতল, সে ঘন গুল্মসমাচ্ছন্ন অরণ্যের অধিবাসী ; নিঝরসংলগ্ন বন ভূমি ও অবারিত উপত্যকা-ক্ষেত্রের পক্ষপাতী। গুদার জামা পরা এই সব সুন্দর সৌখিন জন্তু গুলি দলে দলে যখন সংকীর্ণ বন পথ দিয়ে মন্থর গতিতে জলে যায় কিম্বা বাঁশ বনের মধ্যে ছুটে চলে তখন বড় সুন্দর দেখায়। আবার যখন মুক্ত প্রান্তরে উদ্দাম দ্রুতগতিতে ছুটে চলে তখন হাতীর উপর বসে তাদের শিকার করে আমােদও যথেষ্ট পাওয়া যায়। ভীতি-সঙ্কেত জানাতে এরা বিশেষ পট। সম্প্রতি এদের এই সঙ্কেতের সহায়তায় আমরা এক জোড়া আহত ভালুকের সন্ধান করতে পেরে ছিলাম। এ ছাড়া একটি আহত বাঘও আমাদের চোখে ধূলাে দিয়ে বন্ধুর পতপথে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। চিতলের সঙ্কেত অনুসরণ করে আমরা তারও আশ্রয়স্থান আবিস্কার করেছিলাম। মুন্টজাক, সচরাচর যে Barking Deer নামে অভিহিত, সে দেখতে সুন্দর। স্বভাব কিছু ভীরু আর লাজুক, তাই একা একা থাকতে ভালবাসে। তার উপরের আধ খানা শরীর ঈষদার, উজ্জ্বল। দাড়ীর কাছটা পঙ্গল , সাদা গারের উপর চার দিকে ছড়ান সাদা সাদ। ছাপ। সংসা যখন খুর খুর করে এদিকে ওদিকে ছুটে পালায় তখন তার হাল্ক। চেহারাটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গতিবিধির মধ্যেও বিশেষত্ব আছে। তাকে দেখার যখন সব চেয়ে কম প্রত্যাশা করা যায় তখনই সে এসে উপস্থিত হয়। শিং জোড়াটা এমি ছােট যে তা দিয়ে বেশ সুন্দর কলমদান হতে পারে। আমি একবার