পাতা:টুনটুনির বই.djvu/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তখন শিয়াল বললে, ‘আচ্ছা, রোস রোস। ঐ যে একটা বাঘ আসছে। আমার ঝপাংটা দাও, এখুনি ওকে ভতাং করছি।’

 ঝপাং বলেও কিছু নেই, ভতাং বলেও কিছু নেই—সব শিয়ালের ফাঁকি। বাঘের কিন্তু সেই ঝপাং আর ভতাং শুনেই প্রাণ উড়ে গেল, সে ভাবলে, ‘মাগো, এই রেল পালাই, নইলে না জানি কি দিয়ে কি করবে এসে।’ বলে সে আর সেখানে একটুও দাঁড়াল না। শিয়াল চেয়ে দেখলে যে, সে লাফে লাফে ঝোপ জঙ্গল ডিঙিয়ে ছুটে পালাচ্ছে! তখন শিয়াল আর শিয়ালনী লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললে, ‘যাক, আপদ কেটে গেছে!’

 বাঘ তখনো এমনি ছুটেছে যে তেমন আর সে কখনো ছোটেনি।

 একটা বানর গাছের উপর থেকে তাকে ছুটতে দেখে ভারী আশ্চর্য হয়ে ভাবলে, ‘তাই তো, বাঘ এমনি করে ছুটছে, এ তে সহজ কথা নয়! নিশ্চয় একটা ভয়ানক কিছু হয়েছে?’ এই ভেবে সে বাঘকে ডেকে জিগগেস করলে, ‘বাঘ ভাই, বাঘ ভাই, কি হয়েছে? তুমি যে অমন করে ছুটে পালাচ্ছ?’

 বাঘ হাঁপাতে-হাঁপাতে বললে, ‘সাধে কি পালাচ্ছি? নইলে এক্ষুণি আমাকে ধরে খেত!’

 বানর বললে, ‘তোমাকে ধরে খায় এমন কোনো জানোয়ারের কথা তো আমি জানিনে। ও কথা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না!’

 বাঘ বললে, ‘সেখানে থাকতে বাপু, তবে দেখতুম! দূর থেকে অমনি করে সকলেই বলতে পারে?’

 বানর বললে, ‘আমি যদি সেখানে থাকতুম, তবে তোমাকে বুঝিয়ে দিতুম যে সেখানে কিছু নেই। তুমি বোকা, তাই মিছামিছি অত ভয় পেয়েছ।’ এ কথায় বাঘের ভারী রাগ হল!

 সে বললে, ‘বটে! আমি বোকা? আর তোমার বুঝি ঢের বুদ্ধি! চল তো একবার সেখানে যাই।’

 বানর বললে, ‘যাব বৈকি, যদি আমাকে পিঠে করে নিয়ে যাও।’

 বাঘ বললে, ‘তাই সই! আমার পিঠে বসেই চল!’ এই বলে সে বানরকে পিঠে করে আবার গর্তের দিকে ফিরে চলল।

 শিয়াল আর শিয়ালনী সবে ছানাদের শান্ত করে একটু বসেছে আর অমনি বানরকে পিঠে করে বাঘ আবার আসছে। তখন শিয়ালনী তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে আবার ছানাগুলোকে চিমটি কাটতে লাগল, ছানাগুলিও ভূতের মতো চ্যাঁচাতে শুরু করল।

 তখন শিয়াল আবার সেই রকম সুর করে বললে, ‘আরে থামো, থামো! অত চেঁচিও না—অসুখ করবে।’

১০৭