তারপর শিয়াল হাঁড়িচাঁচাদের কাছে, ঘুঘুদের কাছে, কুঁক্কো পাখিদের কাছে, উৎক্রোশ পাখিদের কাছে, বৌ-কথা-ক-দের কাছে, ময়ূরদের কাছে, চোখ-গেলদের আর ভগদত্তদের কাছে গিয়েও তেমনি করে নিমন্ত্রণ করে এল। তারা সবাই বললে, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, যাব, যাব!’
এ সব কাজ শেষ হতে সাতদিন লাগল। তার পরের দিন রাত্রিতে বিয়ে। শিয়াল তার বন্ধুর জন্যে চমৎকার পোশাক ভাড়া করে এনে যখন সেই পোশাক তাকে পরিয়ে দিলে তখন সত্যি-সত্যিই তাকে খুব বড় একটা রাজার মতন মনে হতে লাগল। যাদের নিমন্ত্রণ, তারা সবাই এল। যাবার সময় হলে, শিয়াল তাদের সকলকে নিয়ে রাজার বাড়ি চলল।
রাজার বাড়ি যখন এক ক্রোশ দূরে, তখন শিয়াল সকলকে ডেকে বললে, ‘ভাই সকল, ঐ দেখ রাজার বাড়ির আলো দেখা যাচ্ছে। তোমরা ঐ আলো দেখে খুব ধীরে-ধীরে এস। আমি ততক্ষণ ছুটে গিয়ে রাজামশাইকে খবর দি।’
সবাই বললে, ‘আচ্ছা।’
শিয়াল বললে, ‘তবে একবার তোমরা সবাই মিলে গান ধর তো! দেখি কার কেমন গলার জোর।’ অমনি পাঁচ হাজার শিয়াল মিলে চেঁচাতে লাগল, ‘হুয়া, হুয়া, হুয়া, হুয়া!’
বারো হাজার ব্যাঙ বললে, ‘ঘোঁৎ, ঘোঁৎ, ঘেঁয়াও, ঘেঁয়াও!’
সাত হাজার শালিক বললে—
ফড়িং সঙ্গে সঙ্গে চারিজনং
চকিৎ কাট কাট কাট গুরুচরণ!
দুহাজার হাঁড়িচাঁচা বললে, ‘ঘ্যাঁচা, ঘ্যাঁচা, ঘ্যাচা, ঘ্যাঁচা, ঘ্যাঁচা, ঘ্যাঁচা!’
চার হাজার ঘুঘু বললে, ‘রঘু, রঘু, রঘু, রঘু, রঘু, রঘু!’
তিন হাজার কুঁক্কো বললে, ‘পুৎ, পুৎ, পুৎ, পুৎ, পুৎ, পুৎ!’
উনিশ শো উৎক্রোশ বললে, ‘হাঁ আঃ, হাঁ আঃ, হাঁ আঃ, ও হো হো হো হো!’
আর যত বৌ-কথা-ক, ময়ূর, ভগদত্ত আর চোখ গেল, তারাও সবাই মিলে যার-যার নিজের গান ধরতে ছাড়ল না।
তখন শুনতে কেমন হয়েছিল তা সেখানে থাকলে বোঝা যেত। রাজার বাড়ির লোকেরা দূর থেকে তা শুনে তো ভয়ে কাঁপতেই লাগল। তারপর যখন শিয়াল রাজামশাইকে খবর দিতে এল, তখন তিনি ভারী ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘শিয়াল পণ্ডিত, ওটা কিসের গোলমাল?’
শিয়াল বললে, ‘ওটা আমাদের বাজনা আর লোকজনের শব্দ!’