পাতা:টুনটুনির বই.djvu/৪৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

তুই আমার বাড়ি চল। শুনেছি তুই খুব ভাল রাঁধিস।’ তাইতে উকুনে-বুড়ী বকের বাড়িতে রাঁধুনি হল। তার রান্না বকের বেশ ভালো লাগত, আর পাতে উকুন পড়লে তো সে খুব খুশীই হত।

 তখন, একদিন হয়েছে কি—বক এনেছে একটা মস্ত শোল মাছ। এনে সে উকুনে-বুড়ীকে বলল, ‘উকুনে-বুড়ী, মাছটা বেশ করে রাঁধ।’

 বলে সে আবার নদীর ধারে চলে গেল। উকুনে-বুড়ী মাছ রাঁধতে লাগল। রাঁধতে-রাঁধতে বেচারা মাথা ঘুরে কখন কড়ার মধ্যে পড়ে গিয়েছে কেউ জানতে পারেনি।

 বক এসে দেখলে, উকুনে-বুড়ী পুড়ে মরে আছে। দেখে তার এমনি দুঃখ হল যে, সে নদীর ধারে গিয়ে মুখ ভার করে বসে রইল, সাতদিন কিছু খেল না।

 নদী বললে, ‘ভালোরে ভালো, সাতদিন ধরে এমন করে বসে আছে, খায়-দায়নি। এর হল কি? হ্যাঁ ভাই বক, তোর হয়েছে কি ভাই?’

 বক বললে, ‘আরে ভাই, সে কথা বলে কি হবে? আমার যা হবার তা হয়েছে।’

 নদী বললে, ‘ভাই, আমাকে বলতে হবে।’

 বক বললে, ‘যদি বলি, তবে কিন্তু তোর সব জল ফেনা হয়ে যাবে।’

 নদী বললে, ‘হয় হবে, তুই বল।’

 তখন বক বললে,

উকুনে-বুড়ী পুড়ে মোলো,
বক সাতদিন উপোস রইল।

 অমনি ফ্যান-ফ্যান করে দেখতে-দেখতে নদীর জল ফেনিয়ে সাদা হয়ে গেল।

 সেই নদীতে এক হাতি রোজ জল খেতে আসে। সেদিন সে জল খেতে এসে দেখে, একি কাণ্ড হয়ে আছে।

 হাতি বললে, ‘নদী, তোর একি হল? তোর জল কি করে ফেনা হয়ে গেল?’

 নদী বললে, ‘তা যদি বলি, তবে কিন্তু তোর লেজটি খসে পড়ে যাবে।’

 হাতি বললে, ‘যায় যাবে তুই বল।’ তখন নদী বললে—

উকুনে-বুড়ী পুড়ে মোলো,
বক সাতদিন উপোস রইল,
নদীর জল ফেনিয়ে গেল।

 অমনি ধপাস করে হাতির লেজটা খসে পড়ে গেল।

৪১