পাতা:টুনটুনির বই.djvu/৬১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

  শুনে চড়নী ভারী ব্যস্ত হয়ে বললে, ‘চুপ, চুপ! এখন হাঁচতে হবে না, তাহলে বড় মুশকিল হবে।’

 তাতে চড়াই চুপ করল। কিন্তু খানিক বাদেই আবার ভয়ানক নাক-মুখ সিঁটকিয়ে হাঁচতে গেল। চড়নী তাকে থামাতে কত চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুতেই থামিয়ে রাখতে পারল না।

 বাঘ একটা বিশ্রী পিঠে খেয়ে বলল, ‘থু! থু! এটা খালি গোবর দিয়েই গড়েছে, আর কিছু দেয়নি। যদি চড়াইয়ের নাগাল পাই, তাকে কামড়িয়ে চিবিয়ে খাব।’

 তারপর আর একটা পিঠে মুখে দিয়ে সে সবে ওয়াক্-ওয়াক্ করতে লেগেছে, অমনি হ্যাঁ-চ্ছোঃ করে চড়াই ভয়ানক শব্দে হেঁচে ফেললে। সে শব্দে বাঘ যেই চমকে লাফিয়ে উঠতে যাবে, অমনি হাঁড়িসুদ্ধ দড়ি ছিঁড়ে, চড়াই আর চড়নী তার ঘাড়ে পড়ল।

 বাঘ কিছুই বুঝতে পারলে না, কি বাজ পড়ল, না আকাশ ভেঙে পড়ল! সে খুব ভয় পেয়ে লেজ গুটিয়ে সেখান থেকে ছুট দিল, আর তার ঘরে না গিয়ে থামল না।



দুষ্ট বাঘ



রাজার বাড়ির সিংহ-দরজার পাশে, লোহার খাঁচায় একটা মস্ত বাঘ ছিল। রাজার বাড়ির সামনে দিয়ে যত লোক যাওয়া-আসা করত, বাঘ হাত জোড় করে তাদের সকলকেই বলত, ‘একটিবার খাঁচার দরজাটা খুলে দাও না দাদা!’ শুনে তারা বলত, ‘তা বইকি! দরজাটা খুলে দি, আর তুমি আমাদের ঘাড় ভাঙো।’

 এর মধ্যে রাজার বাড়িতে খুব নিমন্ত্রণের ধুম লেগেছে। বড়-বড় পণ্ডিত মশাইয়েরা দলে-দলে নিমন্ত্রণ খেতে আসছেন। তাদের মধ্যে একজন ঠাকুর দেখতে ভারী ভালোমানুষের মতো ছিলেন। বাঘ এই ঠাকুরমশাইকে বার-বার প্রণাম করতে লাগল।

 তা দেখে ঠাকুরমশাই বললেন, ‘আহা, বাঘটি তো বড় লক্ষ্মী! তুমি কি চাও বাপু?’

 বাঘ হাত জোড় করে বললে, ‘আজ্ঞে, একটি বার যদি এই খাঁচার দরজাটা খুলে দেন! আপনার দুটি পায়ে পড়ি।’

৫৭