সাক্ষী খুঁজতে দুজনে মাঠে গেলেন। দুই ক্ষেতের মাঝখানে খানিকটা মাটি উঁচু রেখে, চাষীরা একটি ছোট পথের মতন করে দেয়, তাকে বলে আল। ঠাকুরমশাই সেই আল দেখিয়ে বললেন, ‘এই আমার একজন সাক্ষী।’
বাঘ বললে, ‘আচ্ছা, ওকে জিগগেস করুন, ও কি বলে।’
ঠাকুরমশাই তখন জিগগেস করলেন, ‘ওহে বাপু আল, তুমি বল দেখি, আমি যদি কারো ভালো করি সে কি উল্টে আমার মন্দ করে?’
আল বললে, ‘করে বইকি ঠাকুর। এই আমাকে দিয়ে দেখুন না। দুই চাষার ক্ষেতের মাঝখানে আমি থাকি, তাতে তাদের কত উপকার হয়। একজনের জমি আর একজন নিয়ে যেতে পারে না, একজনের ক্ষেতের জল আর একজনের ক্ষেতে চলে যায় না। আমি তাদের এত উপকার করি, তবু হতভাগারা লাঙ্গল দিয়ে আমাকেই কেটে তাদের ক্ষেত বাড়িয়ে নেয়!’
বাঘ বললে, ‘শুনলেন তো ঠাকুরমশাই, ভালো করলে তার মন্দ কেউ করে কিনা?’
ঠাকুরমশাই বললেন, ‘রোসো, আমার তে আরো দুজন সাক্ষী আছে।’
বাঘ বললে, ‘আচ্ছা চলুন।’
মাঠের মাঝখানে একটা বটগাছ ছিল। ঠাকুরমশাই তাকে দেখিয়ে বললেন, ‘ঐ আমার আর একজন সাক্ষী।’
বাঘ বললে, ‘আচ্ছা, ওকে জিগগেস করুন; দেখি ও কি বলে।’
ঠাকুরমশাই বললেন, ‘বাপু বটগাছ, তোমার তো অনেক বয়স হয়েছে, অনেক দেখেছ শুনেছ। বল দেখি, উপকার যে করে তার অপকার কি কেউ করে!’
বটগাছ বললে, ‘তাই তো লোক আগে করে। ঐ লোকগুলো আমার ছায়ায় বসে ঠাণ্ডা হয়েছে, আর আমাকেই খুঁচিয়ে আমার আঠা বার করেছে। আবার সেই আঠা রাখবার জন্যে আমারই পাতা ছিঁড়েছে। তারপর ঐ দেখুন, আমার ডালটা ভেঙে নিয়ে চলেছে।’
বাঘ বললে, ‘কি ঠাকুরমশাই, ও কি বলছে।’
তখন ঠাকুরমশাই তো মুশকিলে পড়লেন। আর কি বলবেন, ভেবে ঠিক করতে পারলেন না। এমন সময় সেখান দিয়ে একটা শিয়াল যাচ্ছিল। ঠাকুরমশাই সেই শিয়ালকে দেখিয়ে বললেন, ‘ঐ আমার আর একজন সাক্ষী। দেখি, ও কি বলে?’
তারপর তিনি শিয়ালকে ডেকে বললেন, ‘শিয়ালপণ্ডিত, একটু দাঁড়াও। তুমি আমার সাক্ষী।’
শিয়াল দাঁড়াল, কিন্তু কাছে আসতে রাজী হল না। সে দূর থেকেই জিগগেস করল, ‘সে কি কথা! আমি কি করে আপনার সাক্ষী হলুম?’