জোলা কাঁপছে আর গাছের পাতা নড়ছে। বাঘেরা তাতে ব্যস্ত হয়ে চেয়ে দেখল, কিন্তু পাতার আড়ালে ছিল বলে জোলাকে চিনতে পারল না।
একজন বললে, ‘ভাই, গাছের উপর ওটা কি?’
আর একজন বললে, ‘দেখ ভাই, ওটার কি মস্ত লেজ!’
লেজ তো নয়, জোলার কাপড় ঝুলছিল। পাতার জন্যে ভালো করে দেখতে না পেয়ে বাঘেরা তাকেই লেজ মনে করেছে। সেই লেজ দেখে একটা বুড়ো বাঘ বললে, ‘ওটা একটা খুব ভয়ানক জানোয়ার হবে, হয়তো বা টাগই হবে।’ এই কথা শুনেই তো সব বাঘ মিলে ‘ধরলে ধরলে! পালা, পালা!’ বলে সেখান থেকে ছুটে পালাল। তখন জোলাও গাছ থেকে নেমে বাড়ি গেল।
জোলাকে দেখে তার ছেলে বললে, ‘কই বাবা, ঘোড়া কই?’
জোলা তার গালে ঠাস করে এক চড় মেরে বললে, ‘এই নে তোর ঘোড়া!’
তারপর থেকে সে-ছেলে আর ঘোড়ার কথা বলত না।
বাঘ কিনা মামা আর শিয়াল কিনা ভাগ্নে, তাই দুজনের মধ্যে বড্ড ভাব।
শিয়াল একদিন বাঘকে নিমন্ত্রণ করল, কিন্তু তার জন্যে খাবার কিছু তয়ের করল না। বাঘ যখন খেতে এল, তখন তাকে বললে, ‘মামা, একটু বস। আর দু-চারজনকে নিমন্ত্রণ করেছি, তাদের ডেকে নিয়ে আসি।’
এই বলে শিয়াল চলে গেল, আর সে রাত্রে বাড়ি ফিরল না। বাঘ সারারাত বসে থেকে, সকালবেলা শিয়ালকে বকতে-বকতে বাড়ি চলে গেল।
তারপর একদিন বাঘ শিয়ালকে নিমন্ত্রণ করল। শিয়াল এলে তাকে খেতে দিল মস্ত-মস্ত মোটা-মোটা হাড়। তার এক-একটা লোহার মতো শক্ত। শিয়াল বেচারার চারটে দাঁত ভেঙে গেল, তবু সেই হাড়ের একটুও সে চিবিয়ে ভাঙতে পারল না। বাঘ ঐ রকম হাড় খেতেই খুব ভালোবাসে। সে মনের সুখে পেট ভরে সব হাড় চিবিয়ে খেলে, আর বললে, ‘কি ভাগ্নে, পেট ভরল তো?’
শিয়াল হাসতে-হাসতে বললে, ‘হ্যাঁ মামা, আমার বাড়িতে তোমার যেমন পেট ভরেছিল, তোমার বাড়িতেও আমার তেমনি পেট ভরেছে।’ মনে-মনে কিন্তু তার ভয়ানক রাগ হল, আর সে বললে, ‘যদি বাঘমামাকে জব্দ করতে পারি, তবে দেশে ফিরব, নইলে আর দেশে ফিরব না।’
এই মনে করে শিয়াল সে-দেশ ছেড়ে আর এক দেশে চলে গেল। সে নতুন