তখন কুমির তো বড্ড চটেছে, আর বলছে, ‘দাঁড়াও শিয়ালের বাছা, তোমাকে দেখাচ্ছি। এবারে আর আমি তোমাকে আগা নিতে দেব না। সব আগা আমি নিয়ে আসব!’
সেবার হল আখের চাষ।
কুমির তো আগেই বলেছে, এবার আর সে আগা না নিয়ে ছাড়বে না। কাজেই শিয়াল তাকে আগাগুলো দিয়ে, নিজে আখগুলো নিয়ে ঘরে বসে মজা করে খেতে লাগল।
কুমির আখের আগা ঘরে এনে চিবিয়ে দেখলে, খালি নোন্তা, তাতে একটুও মিষ্টি নেই। তখন সে রাগ করে আগাগুলো সব ফেলে দিয়ে শিয়ালকে বললে, ‘না ভাই, তোমার সঙ্গে আর আমি চাষ করতে যাব না, তুমি বড্ড ঠকাও!’
কুমির দেখলে, সে শিয়ালের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠছে না। তখন সে ভাবলে, ‘ও ঢের লেখাপড়া জানে, তাতেই খালি আমাকে ফাঁকি দেয়। আমি মুর্খ লোক, তাই তাকে আঁটতে পারি না।’ অনেকক্ষণ ভেবে কুমির এই ঠিক করল যে, নিজের সাতটা ছেলেকে শিয়ালের কাছে দিয়ে খুব করে লেখাপড়া শেখাতে হবে। তার পরের দিনই সে ছানা সাতটাকে সঙ্গে করে শিয়ালের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হল। শিয়াল তখন তার গর্তের ভিতরে বসে কাঁকড়া খাচ্ছিল। কুমির এসে ডাকলে, ‘শিয়াল পণ্ডিত, শিয়াল পণ্ডিত, বাড়ি আছ?’
শিয়াল বাইরে এসে বললে, ‘কি ভাই, কি মনে করে?’
কুমির বললে, ‘ভাই, এই আমার ছেলে সাতটাকে তোমার কাছে এনেছি। মুর্খ হলে করে খেতে পারবে না। ভাই, তুমি যদি এদের একটু লেখাপড়া শিখিয়ে দাও।’
শিয়াল বললে, ‘সে আর বলতে? আমি সাতদিনে সাতজনকে পড়িয়ে পণ্ডিত করে দেব।’ শুনে কুমির তো খুব খুশী হয়ে ছানা সাতটাকে রেখে চলে গেল।
তখন শিয়াল তাদের একটাকে আড়ালে নিয়ে বললে—
‘পড় তো বাপু—কানা খানা গানা ঘানা,
কেমন লাগে কুমির ছানা?’