পাতা:তত্ত্ববিচার.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তত্ত্ববিচার।

কলুষত জীব আমরা, সৎসঙ্গও আমাদের পক্ষে দুর্ঘট হইয়া উঠিয়াছে। সাধুর অভাব হইয়াছে বলিয়া যে সাধুসঙ্গ হয় না, তাহা নহে; সাধু শত শত থাকিলেও, আমাদের চক্ষুর দোষে আমরা যে সাধু দেখিতে পাই না, তাহার উপায় কি? আমার মনের দ্বোষে, আমার চক্ষুর দোষে আমি যে সাধুকেও অসাধু বলিয়া বুঝি! আবার ভ্রমে পড়িয়া কখনও অসাধুকে ও সাধু বলিয়া বুঝি! ইহার উপায় কি?

 প্রকৃত সাধুকে চিনিয়া লওয়া নিতান্ত সহজ নহে। যাঁহারা বিদ্যাভিমানী, তাঁহারা, সন্ন্যাসী বিদ্যাবান্ কি না, এই পরীক্ষা দ্বারা সাধু চিনিতে চাহেন; যাঁহারা তার্কিক, তাঁহাদের তর্কজালে সাধু যদি পরাস্ত হ’ন, তবে তাঁহাকে তাঁহারা সাধু বলিতে চাহেন না; অথবা সাধু তর্ক করিতে অসম্মত হইলে, তার্কিক তাঁহাকে সাধু বলিয়া স্বীকার করিলেন না। কাহারও মতে গৈরিক বসন পরিলে, কাহারও মতে ভষ্মাচ্ছাদিত-কলেবর ও জটামগুলমণ্ডিতমস্তক হইলে সাধু হওয়া যায়; কাহারও মতে দিগম্বর থাকিলে ও কাহারও সহিত কথাবার্ত্তা না কহিলে সাধু হওয়া যায়; কাহারও মতে যিনি ভোজন করেন না, মলমূত্র ত্যাগ করেন না, নিদ্রা যান না, তিনিই সাধু; কাহারও মতে যিনি বন্ধ্যার পুত্র হইবার ঔষধ দেন ও লোককে নানা যন্ত্রমন্ত্র দ্বারা মারণ, উচ্চাটন, বশীকরণাদির ব্যবস্থা করিয়া দেন, তিনিই সাধু। এইরূপে নানা লোকে নিজ নিজ কল্পনা-প্রসূত লক্ষণ দ্বারা সাধুর পরিচয় লইতে চান। কিন্তু সভ্য মহোদয়গণ! ইহা নিশ্চয় জানিবেন, যেমন স্বয়ং সুপণ্ডিত না হইলে কোনও পণ্ডিতের পাণ্ডিত্য পরীক্ষা করা যায় না, সেইরূপ স্বয়ং সাধুপ্রকৃতি না হইলে সাধুর সাধুতা বুঝিতে পারা যায় না। সাধুর নিকট গিয়া কি লক্ষণ দ্বারা সাধু বুঝিতে হয়, তাহা সাধু ভিন্ন আর কেহ বলিয়া দিতে পারেন না। সাধুর রক্তমাংসময় শরীর