পাতা:তত্ত্ববিচার.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তত্ত্ববিচার।
১৫

পুত্র রাজ-সভায় আসিলেন না কেন? গুরু উত্তর করিলেন, তাহা আমি জানি না; সে সর্ব্বদাই গীতা লইয়া পাঠ ও পূজায় ব্যস্ত থাকে, অন্য কোন কার্য্যে তাহাকে অভিনিবিষ্ট হইতে দেখিতে পাই না। রাজা মনে মনে ভাবিলেন, এইবার ফলে রং ধরিয়াছে। রাজা এক দিন প্রাতঃকালে গুরু-গৃহে গিয়া দেখিলেন, গুরুপুত্র অতি প্রীতি সহ নিবিষ্টচিত্তে পূজার আসনে বসিয়া গীতা পাঠ করিতেছেন। পাঠ সমাপ্ত হইলে, রাজা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, এবার আপনি শাস্ত্রার্থ-বিচার জন্য রাজসভায় যা’ন নাই কেন? গুরুপুত্র উত্তর করিলেন, মহারাজ! এবার আমি সাধুর নিকট গীতা পড়িয়া আসিয়াছি, জিগীষা-বুদ্ধি দূরীভূত হইয়াছে, সাধু-সহবাসে অহম্মন্যতাবুদ্ধি বিমর্দ্দিত ও বিচূর্ণিত হইয়াছে, বিষয়-সেবা অপেক্ষা ভগবৎসেবাই প্রধান বলিয়া উপলব্ধি হইয়াছে; তাই আর বৃথা তর্কবিতর্ক করিতে, তাই আর সভা-বিজয়ী হইতে ইচ্ছা নাই, ভগবদগীতার ভাবরসে ডুবিয়া থাকিতে সদাই অভিলাষ। মহারাজ! সভায় যাইতে আর আমাকে অনুরোধ করিবেন না। রাজা গুরুকুলে মহা পুরুষ দর্শন করিয়া আনন্দিত হইলেন, এবং তাঁহার দর্শন-দক্ষিণা স্বরূপ তাঁহার স্বচ্ছন্দে জীবিকানির্ব্বাহের উপযুক্ত একটা ভূ-সম্পত্তি তাঁহাকে দান করিলেন। শুশ্রূষু মহোদয়গণ! ব্রাহ্মণ বালক যে সাধুসহবাস করিয়াছিলেন, সাধুর সুধামাখা যে উপদেশ পাইয়াছিলেন, সাধু সমীপে শাস্ত্র-শিক্ষা করিবার সময়ে যে সাধুশক্তি তাঁহাতে সঞ্চারিত হইয়াছিল, তাই তাহাতে সাধুসঙ্গের ফল ফলিয়াছিল।

 সূক্ষাতিসূক্ষ্ণ পদার্থ সুন্দর ও সম্পূর্ণরূপে দেখিতে হইলে সৎসঙ্গই দিব্য চক্ষু। সহজ চক্ষে যাহা দেখা যায়, দূরবীক্ষণ ও অণুবীক্ষণের সাহায্যে, সেই পদার্থ যেমন আরও নিগৃঢ়রূপে দৃষ্ট হইয়া থাকে