পাতা:তত্ত্ববিচার.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তত্ত্ববিচার।

তাহারাই, ইহা বড় কঠিন মনে করিয়া থাকে। লোকের সংস্কার সন্ন্যাসী বড় ক্লেশ ভোগ করেন; কিন্তু যাহার সংসারে আসক্তি নাই, তাহার পক্ষে সংসারত্যাগ অতীব সহজ —ভূতলে শয়ন ও ভষ্মলেপন বা কৌপীনধারণ তাহার অতি প্রীতিপ্রদ। আবার যাঁহার সন্ন্যাসীর সাজ সন্ন্যাসীর কাজ ভাল লাগিল বলিয়া সংসারে বিরক্তি, তাঁহার তো আসক্তি সম্পূর্ণ ই রহিয়াছে; বৈরাগ্য তাঁহার কোথায়! সংসার ছাড়িয়া সন্ন্যাসের প্রতি ভালবাসা হইয়াছে, এই মাত্র প্রভেদ; কিন্তু এক দিকে আসক্তি আছেই। আমার অম্ল ভাল লাগে না, সুতরাং খাই না; ইহা আর কঠিন কি? আর তিক্ত খাইতে আমার ভাল লাগে, তাই খাই; তাহাতেই বা আশ্চর্য কি? বাস্তবিক আসক্তিবুদ্ধিতে সংসারী বা সন্ন্যাসী হওয়া উভয়ই প্রবৃত্তির কার্য্য। প্রবৃত্তি সদা পরিবর্ত্তনশীলা, এই জন্য স্থায়ী ফলের আশাও অতি অল্প। ভোগ ও ত্যাগ উভয়েই অনাসক্তবুদ্ধি না হইলে বাস্তবিক বৈরাগ্য হয় না — অর্থাৎ যিনি সম্মানিত হইলেও সুখ বোধ করেন না, আবার অসম্মানিত হইয়াও যাঁহার ক্লেশ-বুদ্ধি হয় না, তিনিই প্রকৃত, বৈরাগ্যবান্ পুরুষ; যিনি ভোগ-ত্যাগী ও ত্যাগ-ত্যাগী, তিনিই প্রকৃত বিরাগী। যিনি “কভী এওল খানা, কভী মুঠী ভর চনা, কভী ওভী মনা” এই ত্রিবিধ অবস্থাতেই সদা সম-সন্তোষ-ষুক্ত থাকেন, তাহারই বৈরাগ্য প্রকৃত পরিপক্কতা লাভ করিয়াছে বলিতে হইবে। শাস্ত্রে ইহার লক্ষণমাত্রই দৃষ্ট হইয়া থাকে, কিন্তু এরূপ আদর্শ কুত্রাপি পাওয়া যায় না। অতুলজ্ঞানসম্পন্ন বশিষ্ঠদেবের ন্যায় জ্ঞানবান্ মহাত্মাও পুত্রশোকে ক্ষুব্ধ ও আপনাকে পাশবদ্ধ করিয়া আত্মহত্যা করিতে প্রবৃত্ত এবং মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসও শুকবিরহে ব্যাকুল হইয়াছিলেন। তবে কি এ বৈরাগ্য অসম্ভব? আমরা বলি, বিচারবুদ্ধি দ্বারা চেষ্টা করিয়া বৈরাগ্য সাধন করিলে, তাহাই