পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ণ ১৮১৩

শ্রীচৈতন্য ও র্তাহার শিষ্যগণ

গোস্বামীকে চৈতন্যপ্রচারিত বৈষ্ণব ধৰ্ম্মের ভৃতি বহুল গ্রন্থ প্রণয়ন করেন । এই বেদব্যাস বলা যাইতে পারে। র্তাহার। জ্ঞানগর্ভ ও প্রেমভক্তিরসাত্মক বিবিধ গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়া শ্রীচৈতন্যের প্রেম ভক্তির ধৰ্ম্মকে ভারতে দৃঢ় করিয়া গিয়াছেন । রূপ গোস্বামী ভক্তিরসামুত সিন্ধু, ললিতমাধব ও বিদগ্ধমাধব নাটক, এবং জীব গোস্বামী যটুসন্দর্ভ ও ভাগবৎ | সন্দর্ভ প্রভৃতি গ্রন্থে প্রেমভক্তিরসের গভীর সিদ্ধান্ত সকল স্থশৃঙ্খলার সহিত লিপিবদ্ধ করিয়া ভক্তি-তত্ত্ব-বিজ্ঞন প্রচার করিয়াছেন । বৃদ্ধ বয়সে ই হারা বৃন্দাবনে দ্বারে দ্বারে যৎসামান্য মাধুকরী ভিক্ষা দ্বারা কথঞ্চিং রূপে জীবন ধারণ করত তরুতল আশ্রয় করিয়া কেবল হরিগুণানু কীৰ্ত্তন, গ্রন্থানুশীলন ও গ্রন্থরচনাতে নিমগ্ন থাকিতেন । ইহঁারাই এ প্রদেশে বৈষ্ণব ধৰ্ম্মের প্রধান প্রচারক ছিলেন এবং শ্ৰীকৃষ্ণের বৃন্দাবন-লীলার রস মাধুর্য্য কামগন্ধশূন্য পবিত্র ভাবে গ্রহণ করিয়া তাহ প্রচার করেন । রূপ গোস্বামী ভক্তিরসামৃতসিন্ধুতে ভক্তিরস ব্যাখ্যান, ও উজ্জ্বল নীলমণি গ্রন্থে রাধাকৃষ্ণের লীলা, বিদগ্ধ মাধব ও ললিত মাধব নাটকদ্বয়ে শ্ৰীকৃষ্ণের ব্রজলীলা ও দ্বারকালীলা বর্ণন করেন । তদ্ভিন্ন দানকেলিকৌমুদী, গোবিন্দবিরুদাবলী, মখুরামাহাত্ম্য, লঘুভাগবত, ব্রজবিলাস প্রভূতি বহুসংখ্যক গ্রন্থ তিনি রচনা করেন। সনাতন গোস্বামী ভাগবতামৃত, হরিভক্তিবিলাস, রসামৃতসিন্ধু গ্রস্থে ভক্ত, ভক্তি ও কৃষ্ণতত্ত্ব, শ্ৰীকৃষ্ণের মাধুর্য্য রসলীলা ও বৈষ্ণবদিগের নিত্যকৃত্য আচার ব্যবহারাদি বিবৃত করিয়াছেন। জীব গোস্বামী ভাগবতসন্দর্ভ, ভক্তিসিদ্ধান্ত, গোপালচন্দ্যপু, উপদেশামৃত, ষট্রসন্দর্ভ প্র সকল গ্রন্থ সংস্কৃত ভাষায় লিখিত । তৰ্যতীত বাঙ্গালা ভাষায় রূপ গোস্বামীকৃত রিপুদমন বিষয়ে রাগময় কোণ ও সনাতন গোস্বামী প্রণীত কৃষ্ণ ভক্তি বিষয়ে রসময় কলিকা এবং জীবগোস্বামী প্রণীত করচা গ্রন্থ আছে, কিন্তু এই সকল প্রাচীন গ্রন্থ এক্ষণে অতীব দুষ্প্র, পা । চৈতন্য সম্প্রদায়ভুক্ত বৈষ্ণবেরা শ্রীচৈতন্য, অদ্বৈন্ধ, নিতানন্দ এই তিন প্ৰভু ব্যতীত যে ছয়জন গোস্বামীকে আদিগুরু বলিয়! স্বীকার করেন, তন্মধ্যে রূপ, সনাতন ও জীব গোস্বামী শীর্ষস্থানে অবস্থিত । চৈতন্য প্রবর্তিত বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে ইহঁার কতদূর প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছিলেন, ইহাতেই তাহ বিলক্ষণ প্রতিপন্ন হইতেছে। শ্রীচৈতন্য রূপ সনাতনকে মথুরা বৃন্দাবনের বিলুপ্তপ্রায় তীর্থ সকল পুনরুদ্ধার করিবার জন্য বারবার অনুরোধ করিয়াছিলেন । ৫ ইহাতে অনুমান হয়, তৎসময়ে মথুরা বৃন্দাবন পরবর্তী কালের ন্যায় প্রসিদ্ধ ছিল না । এক্ষণে যেস্থানে যে যে দেবালয় কুঞ্জ কুটীর প্রভৃতি দেখিতে পাওয়া যায়, তখন তাহা বিদ্যমান ছিল না । চৈতন্যের পরবর্তী সময়ে বৃন্দাবনধাম বিশেষ ভাবে বিখ্যাত হইয়া উঠে, এবং স্থানে স্থানে দেবমন্দির ও সাধক ভক্তদিগের আশ্রম, লতাকুঞ্জশোভিত সুরম্যসাধন কুটার সকল প্রতিষ্ঠিত হইয়া দিব্য শ্ৰীতে পরিশোভিত হয় । চৈতনের সময়ে যে দুই চারি জন ভক্ত বৈষ্ণব তীর্থদর্শনের উদ্দেশে বৃন্দাবন আসিতেন, তাহারা তীর্থ মনে করিয়া বৃন্দাবনের নানাস্থানে পরিভ্রমণ করিয়া বেড়াইতেন । যখন শ্ৰীগৌ-

  • কবি কর্ণধীর প্রণীত “চৈতন্য চন্ত্রোদয়” নাটকের ঁপ্রেমানন্দ দাস কৃত বঙ্গানুবাদ ৯ম অঙ্ক।