পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪৮

তত্ত্ববোধিনী পত্রিক

১৩ কল্প, ১ম ভাগ

রাঙ্গ বৃন্দাবন গমন করিয়া রাধাকুণ্ড তীর্থের অনুসন্ধান করেন, তখন কেহই তাহাকে রাধাকুণ্ডের কথা বলিতে পারেন নাই । পরিশেষে তিনি তীর্থ বিলুপ্ত হইয়াছে জানিয়া, একস্থানে ধান্যক্ষেত্রের অল্প জলে স্নান করিলেন । ইহা দেখিয়া তত্রত্য অধিবাসীরা বিস্মিত হইয়াছিল । উত্তরকালে এইস্থান রাধাকুণ্ড নামে বিখ্যাত হইয়াছে । পুরীসম্প্রদায়ের গুরু মাধবেন্দ্র পুরী মথুরায় আগমন করিয়া গোপালমূৰ্ত্তি প্রকাশ করেন, এবং রূপ গোস্বামী মথুরামাহাত্ম্য গ্রন্থ সংগ্ৰহ করিয়া লোপপ্রাপ্ত তীর্থ সকল পুনঃপ্রকাশিত করিয়াছিলেন । বৃন্দাবনধামে গোবিন্দদেব ও মদনগোপালের সেবা রূপ সনাতনই প্রচার করেন । মদনমোহন ও গোবিন্দজীর মন্দির যাহা ভগ্নাবস্থায় এখনও বৃন্দাবনে অবস্থিত আছে, তাহা রূপ সনাতন কর্ত্তৃৃক স্থাপিত এইরূপ কিম্বদন্তী প্রচলিত আছে । কিন্তু গোবিন্দজীর মন্দিরে ১৫১২ শকের এক শিল্পলিপি প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। তাহাতে লিখিত আছে যে, পৃথুরাও কুলোদ্ভব মানসিংহ তাহা স্থাপিত করেন। **রূপ সনাতন শ্রীচৈতন্যের পরলোক প্রাপ্তির পরেও কিছু কাল জীবিত ছিলেন । চৈতন্যদেব ১৪৫৫ শকে অন্ত হিত হয়েন, সুতরাং শিল্পলিপি অনুসারে গোবিন্দজীর মন্দির গোরলীলা সমাপ্তির ৫৭ বৎসর পরে প্রতিষ্ঠিত । রূপ সনাতন এতদিন পর্য্যন্ত ইহলোকে ছিলেন এরূপ বোধ হয় না। এই মন্দির মানসিংহের প্রতিষ্ঠিত হইলেও রূপ সনাতন কোন রূপে তাহার পরম্পরা কারণ হইতে পারেন । + “তত্ত্ববোধিনী পত্রিক।” ot শকাব্দ, ১৩২ মদনমোহনের মন্দিরপ্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে ভক্তমাল গ্রন্থে বর্ণিত হইয়াছে যে, সনাতন গোস্বামী প্রথমতঃ যমুনাতটে সূৰ্য্যঘাট নামক স্থানের সমীপবর্তী এক নিভৃত উচ্চ ভূমিখণ্ডের উপরে সামান্য কুটীর নিৰ্ম্মাণ করিয়া মদনমোহন-বিগ্রহ সংস্থাপিত করেন । কিয়দিন পরে কোন একজন বণিক নাট্যশালা ও রত্নময় বেদী সমম্বিত স্ববৃহৎ মন্দ্রির নিৰ্ম্মিত করেন ও মদনমোহন বিগ্রহের রীতিমত সেবার বন্দোবস্ত করিয়া দেন । এইরূপ কথিত আছে, শেষাবস্থায় বৃন্দাবনে অবস্থানকালে একদিন সনাতন যমুনাতে স্নান করিতে যাইতেছিলেন, এমন সময় পথিমধ্যে একটি মূল্যবান রত্ন দেখিতে পাইয়া ভাবিলেন, কোন দীন দুঃখীকে ইহা দান করিবেন । কিন্তু ধন রত্ন স্পর্শ করা সন্ন্যাসীর পক্ষে নিষিদ্ধ,এই জন্য উহ! একখানি খাপরাতে উঠাইয়া লইয়। কোন স্থানে মৃত্তিকা দ্বারা আচ্ছাদিত করিয়া রাখিয়া দিলেন । বৰ্দ্ধমান প্রদেশস্থ মানকর গ্রামনিবাসী জীবন নামক এক ব্রাহ্মণ অতিশয় দরিদ্র ছিলেন । এ ব্যক্তির অনেক পরিবার অথচ কিছুই অবলম্বন ছিল না। ব্রাহ্মণ অর্থের আকাঙ্ক্ষায় কাশীতে গিয়া বহু দিন শিবের আরাধনা করেন । শিব প্রসন্ন হইয়া স্বপ্নাবস্থায় এই আদেশ করেন, বৃন্দাবনে সনাতন নামে এক গোসাই আছেন, তাহার নিকটে গমন করিলেই তোমার মনস্কামনা পূর্ণ হইবে, লোকদুর্লভ সৰ্ব্বদুঃখহারী বহু ধনরত্ন লাভ করিয়া দরিদ্রতা দূরীভূত হইবে। এ সংসারে কোন সূত্রে কি ঘটনা সঙ্ঘটিত হয় কে বলিতে পারে ? ব্রাহ্মণের ভববন্ধন মোচনের সময় উপস্থিত, তাহ। তিনি জানিতেও পারেন নাই, সামান্য ধনের

**''তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা'' ১৭৭১ শকাব্দ, ১৩২ পৃষ্ঠা।